মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পূর্নিমার ‘জো’ ও ভারি বর্ষণের প্রভাবে আন্ধারমানিক নদীর পানির তোড়ে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর স্লুইসগেটসহ বেড়ীবাঁধ ভেঙে নয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দৌলতপুর গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, পূর্ব দৌলতপুর, খলিলপুর, আমিরাবাদ, মোহনপুর, তাহেরপুর, মোহাম্মদপুর, মোস্তফাপুর ও গৈয়াতলা গ্রামের প্রায় চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানির তোড়ে কয়েক শ’ একর জমির আমনের বীজতলা ভেসে গেছে। দু’দিন আগে গৈয়াতলা স্লুইসসহ বাঁধ বিধ্বস্ত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ রক্ষায় কোনও উদ্যেগ নেয়নি।
এদিকে লালুয়ার চাড়িপাড়া,নাওয়াপাড়া ও মহীপুরের নিজামপুর ভাঙা বাঁধের অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম আবারও তলিয়ে গেছে। চার-পাঁচ ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। প্রায় তিন হাজার একর জমিতে আমন চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। প্রায় দু’শ পরিবার বেড়ীবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান।
গৈয়াতলা গ্রামের সুরাইয়া বলেন, দুইদিন আগে রাতে সেহরি তৈরি করার সময় হুনি বিকট শব্দ। রাইতে অন্য বাসার মানুষও এই শব্দ হোনছে। মানুষ রাইতেই বাইর হইয়া দ্যাহে স্লুইস ভাইঙ্গা পড়ছে। বড় বড় চাঙ্গইল (মাটির বড় টুকরা) লইয়া বান্দের মাটি ভাইঙ্গা পড়েছে। স্লুইস ভাইঙ্গা পড়ার পরই আমাগো গ্রাম পানিতে তলাইয়া যায়।
নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক খান জানান, এখন গোটা এলাকাই পানিবন্দি। অবস্থা এমন হয়েছে যে কোথায় মাঠ,কোথায় খাল-পুকুর তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। জরুরিভিত্তিতে গৈয়াতলা স্লুইসসহ বাঁধ মেরামত না করলে এ মৌসুমে মানুষের দুর্ভোগের আর শেষ থাকবে না।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জমান তারা জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে অন্তত দেড়শ পরিবার বিভিন্ন বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে।
নাওয়াপাড়া গ্রামের স্লুইস ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত ছয় বছর ধরে লালুয়ার মানুষ দুর্ভোগ পোহালেও এখনও চাড়িপাড়া বাঁধ মেরামত হয়নি। এ কারণে গৃহহারা হচ্ছে মানুষ।
মহীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম আকন জানান, নিজামপুর বাঁধ প্রতিদিনই ভাঙছে। জোয়ার হলেই বাঁধের ভেতরে পানি প্রবেশ করছে। তবে এ বার পূর্নিমার জোতে পানি উচ্চতা আরও বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে পাঁচটি গ্রামের মানুষ।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, বর্তমানে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ভাঙা বাঁধ কিংবা স্লুইস মেরামত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ হলে জরুরিভিত্তিতে বাঁধ ও স্লুইস মেরামত করা হবে।