কাজী শাহেদ, রাজশাহী: রাজশাহীর আদালতের এক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন।
গত ৩ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. সানাউল্লাহ’র নামে তিনি জিডিটি করেন। তিন পাতার ওই জিডি নম্বর-১১৯। জিডিতে বিচারকের বিরুদ্ধে ওসিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচারকের নামে সাধারণ ডায়েরি লিপিবব্ধ হওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুর রশিদ।
আদালতের বিচারকের নামে জিডির ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করেন পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিচারকের নামে জিডির ঘটনা আগে কখনও শোনা যায়নি।’
জানা গেছে, রাজশাহীর পবা থানার দুর্গা পারিলা গ্রামের এমাজউদ্দিন গত ২ জুন নয়জনের নামে দণ্ডবিধির ৩৭৯সহ আরও কয়েকটি ধারায় একটি পিটিশন মামলা দাখিল করেন। রাজশাহীর আমলী আদালত-৪ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবা থানার ওসিকে অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করে পরবর্তী নির্ধারিত কার্যদিবসে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু পবা থানার ওসি আলমগীর হোসেন মামলাটি রেকর্ড না করে ফেলে রেখে বাদীকে ঘুরাতে থাকেন।
গত ২ জুলাই মামলার নির্ধারিত দিনে আমলী আদালত-৪ এর বিচারক মোহা. সানাউল্লাহ বাদীর আইনজীবীর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির শুনানি করেন। বাদীর আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, টাকার জন্য ওসি অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেননি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. সানাউল্লাহ আদালতে উপস্থিত কোর্ট জিআরওকে নির্দেশ দেন ওসিকে ফোন করতে। জিআরও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওসি আলমগীরের সঙ্গে ফোন সংযোগ স্থাপন করলে বিচারক ফোন নিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলেন এবং কেন এক মাসেও অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড হয়নি তার কারণ জানতে চান। এরপর বিচারক ফোন রেখে দিয়ে তাকে পরদিন ৩ জুলাই স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়া ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহীর পুলিশ সুপার ও রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজিকে আদেশ দেন। ওসি ওইদিনই অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেন।
তবে ৩ জুলাই ওসি আলমগীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. সানাউল্লাহর নামে পবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তিন পাতার ওই জিডিতে ওসি বিচারকের বিরুদ্ধে তাকে হুমকি দেওয়া ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগ করেছেন। জিডি রেকর্ড করে ওসি তার কপি সদর সার্কেল ও এসপি অফিসে পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ৫ জুলাই ওসি প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেটের খাসকামরায় দেখা করেন এবং পরে আদালতে দাড়িয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে জিডির বিষয়টি বিচারকের কাছে গোপন করে যান।
সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুর রশিদ জানান, বিচারকের নামে পবা থানার ওসি একটি জিডি করেছেন। সেই কপি নিয়ম অনুযায়ী তার কাছেও এসেছে। তবে ওসি আলমগীর হোসেন জানান, তিনি কোনো জিডি করেননি। যে জিডির নম্বর বলা হয়েছে, তাতে থানার পাহারা বদলের কথা উল্লেখ আছে।