মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী আধুষ্যিত মৌলভীবাজারের ঈদ বাজারে বাড়ছে ব্যস্ততা। জেলা শহরের নামিদামি মার্কেটে বাহারী ডিজাইনের পণ্যগুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। তবে নামিদামি সব মার্কেটেই ব্যস্ততা দেখা গেছে প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকায় জেলার অনেক প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশে এসেছেন।
মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলাসহ জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে রাজধানীর মার্কেটের মত পোষাকের আধিপত্য। ক্রেতাদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান সাজিয়েছেন দেশী এবং ভারতীয় পণ্যের সমন্বয়ে। জেলা শহরের এমবি ক্লথ স্টোর, বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, শাহ মোস্তফা গার্ডেন সিটি, আশারাফ সেন্ট্রার, জুলিয়া শপিং সিটি, সুমাইয়া বুটিকসসহ অন্যান্য মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। শুধু কাপড়ের দোকান নয় জুতার দোকান, কসমেটিক্স, টেইলারিং সবখানেই মানুষের ভিড়। বিশেষ করে ব্যাংকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা উত্তোলনে মানুষের ভিড় লক্ষণীয়। টাকা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এদিকে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে প্রতিটি মার্কেটে কেনা-কাটার উপর দেওয়া হচ্ছে বিশেষ কুপন। আর সেইসব কুপনে উল্লেখ রয়েছে আকর্ষণীয় পুরস্কারের ঘোষণা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন নামিদামি মার্কেটের ক্রেতাদের বেশিরভাগই প্রবাসী পরিবারের লোকজন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটানোর উদ্দেশ্যে দেশে ফেরা প্রবাসীদের প্রভাব পড়েছে গ্রামের বাজারেও। পছন্দ হলেই তারা প্যাকেটবন্দি করছেন প্রয়োজনী সামগ্রী। এ ক্ষেত্রে দাম তাদের জন্য কোনো বিষয় না।
এতে ব্যবসায়ীদের লাভ হলেও বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। প্রবাসীদের কারণে বিড়ম্বনায় পড়া কয়েকজন মধ্যবিত্ত ক্রেতা এ জন্য রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশও করেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তবে মধ্যবিত্তরা ছোট-খাটো মার্কেটে কেনাকাটা করলেও নিম্নবিত্তদের ভিড় দেখা গেছে ফুটফাতের মার্কেটগুলোতে।
জেলা শহরের সুমাইয়া বুটিক ফ্যাশনের মালিক মাহবুবুর রহমান রাহেল, কুলাউড়ার রবিরবাজারের টপ ওয়ানের মালিক মুহিবুল ইসলাম আজাদ ও কায়েছ আহমদ জানান, এবারের ঈদে কিরণমালার দাপট বেশি। দাম একটু বেশি হলেও আকর্ষণীয় এ ড্রেস কিনে নিচ্ছেন প্রবাসীদের স্ত্রী-সন্তানসহ সকল শ্রেণির মানুষেরা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে আমাদের অতিরিক্ত কর্মচারীও নিয়োগ দিতে হয়েছে। বিগত ১০ বছরের তুলনায় এবার ঈদের কেনাবেচা ভালো। বর্ষাকাল হলেও প্রাকৃতিক বৈরীতা না থাকায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে আসছে
জেলা শহরের এমবি ক্লথ স্টোরে মার্কেট করতে স্ব-পরিবারে আসা যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা মিলাদ আহমদ ও স্ত্রী জাফরিন বেগমের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাদের পরিবারের সবাই দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাজ্যে থাকেন। গত একবছর দেশে সংকটময় পরিস্থিতি থাকায় তারা দেশে আসতে পারেন নাই, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি শান্ত থাকায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ১৫ দিনের ছুটিতে স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশে এসেছেন।
শাহ মোস্তফা গার্টেন সিটিতে মার্কেট করতে আসা জেরিন বেগম জানান, তার স্বামী ও দুই ছেলে কাতার ও সৌদি আরবে থাকেন। তিনি জানান, পণ্যের দাম মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য হলো পছন্দ। পছন্দ হলেই দামের কথা না ভেবে পণ্য প্যাকেটবন্দি করা হচ্ছে।
এদিকে প্রবাসীদের প্রভাব পড়ছে মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। প্রবাসীরা বেশি দামে পণ্য কেনায় বিপদে রয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এ জেলার প্রায় ৯০ ভাগ পরিবারের পুরুষরা সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ইরাক, কুয়েত, মালয়েশিয়া, কাতার, উমান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানী, ব্রাজিলসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপমহাদেশের বিভিন্ন মার্কেটে কর্মরত রয়েছেন।
অনেক প্রবাসী ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশের স্থায়ী নাগরিক হওয়ার কারণে স্ব-পরিবারে বিদেশে থাকেন। দেশ মাতৃকার টানে দেশে ঈদ করতে এসে বাড়িতে লোকজন না থাকায় নামিদামি হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া করে থাকছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতানের সিনিয়র পাবলিক রিলেশন অফিসার বশির আহমদ জানান, তাদের হোটেলের অধিকাংশ রুম প্রবাসীরা ভাড়া নিয়েছেন।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, ঈদে যাতে সবাই নির্বিঘেœ বাজার করতে পারেন তার জন্য জেলার গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও হাট-বাজারে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।