হায়দার হোসেন, গোপালগঞ্জ: প্রেম করার কারণে তুহিন মোল্লা ওরফে শাহীন (১৮) নামের এক যুবককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার আপন চাচা ও চাচতো ভাইয়েরা। তুহিনের দুই চোখ উপড়ে এবং দুই হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা।
খুনিরা তুহিনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনেস্টেবল শওকত মোল্লার দুই পা কেটে শরীর খেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং তার সৎ ভাই ফিরোজ মোল্লাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে তারা।
ঈদের দিন শনিবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের লায়েক মোল্লার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যার সঙ্গে লায়েক মোল্লার ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল শওকত মোল্লার ছেলে তুহিন মোল্লার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম চলে আসছিল। এটা জানাজানি হলে দুই ভাইয়ের মধ্যে এ নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়।
লায়েক মোল্লা বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার মেয়েকে নানা ভাবে বুঝিয়ে বিরত রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তার ভাতিজাকে পঙ্গু করে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটেন। যাতে তার মেয়ে তুহিনের ওপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী লায়েক মোল্লা মেয়েকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন এবং বাড়ির মালপত্র, গরু-ছাগল ও হাস-মুরগি সরিয়ে নেন। ঈদের দিন রাত ৮টার দিকে লায়েক মোল্লা ও তার ছেলে আরিফুল এবং শরিফুল তুহিনকে বাড়ির পাশে একটি মাছের ঘেরের কাছে ডেকে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার দুই হাত কেটে নেয় এবং দুই চোখ উপড়ে ফেলে। তুহিনের চিৎকার শুনে তার বাবা শওকত ও সৎ ভাই ফিরোজ ঘটনাস্থলে আসলে প্রথমে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে শওকতের দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং ফিরোজকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী তাদেরকে গুরুতর অবস্থায় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। অবস্থার অবনতি ঘটায় কর্তব্যরত ডাক্তাররা তুহিন তার বাবাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা নেওয়ার পথে তুহিন মারা যায়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা পলাতক রয়েছে। এ ব্যপারে আমাদের থানায় এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা জড়িতদের খুজে বের করে অবিলম্বে আইনে সোপর্দ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
উল্লেখ্য, পাথালিয়া গ্রামে প্রায় ছয়মাস আগে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে সরকারের একজন সহকারী সচিব খুন হন। ওই খুনের মামলায় লায়েক মোল্লা ও ছেলেরা আসামি ছিলেন।
মুকসুদপুরে সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিকসহ আহত ২০
মুকসুদপুরে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অন্তত ২০জন আহত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মুকসুদপুর উপজেলার দাসেরহাট গ্রামে থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বেলা দেড়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে উভয় পক্ষের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, ওই গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি ওসি সিরাজুল ও শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রুস্তম আলী মোল্লার মধ্যে এলাকায় আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে আজ দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথাকাটকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই বি এম লিয়াকত হোসেন ও স্থানীয় সাংবাদিক পরেশ বিশ্বাসসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
আহতদের মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ ঠেকাতে ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরো জানান, পরিবেশ শান্ত করতে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার
সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংক থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাজু শেখ নামে এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র রাজু ওই গ্রামের আমিরুল শেখের ছেলে।
তিন দিন আগে রাজু ঢাকা থেকে বাড়ি আসে। বৃহস্পতিবার বন্ধু শিমুলের বাড়িতে বেড়াতে যায়। তারপর থেকে আর তাকে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাঙ্কের মুখ খোলা দেখতে পেয়ে নিহতের চাচা মিটু শেখ সেখানে গিয়ে তার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। প্রাথমিকভাবে তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।