রাজশাহী কাজী শাহেদ: ভূ-গর্ভস্থ থেকে নির্বিচারে চলছে পানি উত্তোলন। যে হারে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানিও সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারছে না। ভূ-গর্ভের কাদা স্তর যেখানে ন্যূনতম পানি থাকা প্রয়োজন, সেটি শূন্য। ভূগর্ভের পানির এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বরেন্দ্রভূমির শস্য উৎপাদন কমে যাবে। এ এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা পড়বে হুমকির মুখে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান।
বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির স্তর ঠিক রাখতে এখন বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চৌধুরী সারোয়ার জাহান রেডক্রস ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি’ প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জানান, তারা বরেন্দ্র অঞ্চলকে এই ভয়াবহ ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম করেছেন। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংগঠন এনজিও ফোরাম তিনটি এলাকায় বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। নাচোলের নিজামপুর, ফতেপুর, এবং রুদ্রকুন্ড খড়িবাড়ি এলাকায় তারা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় যে স্থাপনায় বড় কোনা ছাদ রয়েছে এমন ভবনের ছাদে জমা পানি সরাসরি ভূগর্ভে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভে পানির স্তরের ভয়াবহতা নিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি তানোরের মু-ুমালা পৌর ভবনের পাশে ড্রিল করার সময় ভূগর্ভের কাদার স্তরের নিচে কোনো পানি পাওয়া যায়নি। এটি একটি ভয়াবহ উদাহরণ। এখানেও ভূগর্ভে বৃষ্টির পানি পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গবেষক ড. ইশরাত আরা কেকার গবেষণায় বলা হয়েছে, বরেন্দ্র এলাকায় ক্রমেই কমছে বৃষ্টিপাত। গত চার দশকের বৃষ্টিপাত পর্যবেক্ষণেও এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৮১ সালে যেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে দুই হাজার ২৪১ মিলিমিটার, সেখানে ১৯৯২ সালে বৃষ্টিপাত হয় ৮৪৩ মিলিমিটার। গবেষক ড. ইশরাত আরা কেকার গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বরেন্দ্র এলাকার জীবন এবং জীবিকার ওপর এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় আমন মৌসুমে আবাদ কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। গবেষণায় ১৯৭১ সাল থেকে বৃষ্টিপাতের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে ১৯৭৩, ৭৮, ৭৯, ৮১, ৮২, ৮৯, ৯২, ৯৪ এবং ৯৫ সালে খরা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।