বাঁধ উপচে কয়রার লোকালয়ে জোয়ারের পানি, বরাদ্দের অভাবে নিষ্ক্রিয় পাউবো

প্রতিনিধি, খুলনা: টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানির তোড়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে খুলনার উপকূলীয় জনপদ কয়রার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ। যেকোনো সময় বাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভেসে যেতে পারে গোটা উপজেলা। বরাদ্দ না থাকায় দ্রুত সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।

শনিবার দুপুরে জোয়ারের সময় খুলনার কয়রা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের কয়েকটি নাজুক স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। স্থানীয় জনসাধারণ বাঁধের দুর্বল স্থানে পানি ঠেকানোর জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে পালাক্রমে কাজ করে যাচ্ছেন।

Kayra Flooding
বাঁধ উপচে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কয়রার লোকালয়।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত ও স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে পাউবোর ১৩-১৪/১ নম্বর পোল্ডারের দশাহালিয়া ও ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি, তেতুলতলারচর এলাকার বাঁধ উপচে কপোতাক্ষ নদের পানি প্রবেশ করে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সেসব স্থানে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের কাটকাটা, গাববুনিয়া, চরামুখা ও জোড়শিং এলাকায় বাঁধ ঝুঁকিপুর্ণ বলে জানিয়েছেন তিনি।

কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে দমকা হাওয়ায় ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান দিয়ে শনিবার দুপুরের জোয়ারে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় তা সাময়িক আটকানো সম্ভব হয়েছে। এ অবস্থা দু-একদিন চলতে থাকলে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে জানান তিনি। তার অভিযোগ, বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব স্থান সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হলেও তারা বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান সরদার অভিযোগ করেন, পাউবো কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে তার ইউনিয়নের কাটকাটা ও গাববুনিয়া এলাকার ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে সেখান দিয়ে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, তার ইউনিয়নের মটবাড়ীর হায়াত খালী থেকে পবনা পাউবোর বেড়িবাঁধ মাঝে মাঝে খুবই নাজুক অবস্থা, এছাড়া দশালিয়া বেড়িবাঁধ খুবই করুণ। স্বাভাবিক জোয়ারে আজকে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুর্বল স্থানে বৃষ্টির মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করেছি। দু-এক দিন এ অবস্থা চলতে থাকলে অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।

জানতে চাইলে পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলী মো. মজিবুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সনাক্ত করে রিপোর্ট পাঠনো হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে করণীয় কিছু নেই।

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত বরাদ্দ উপজেলা পরিষদে নেই। এ জন্য আমরা প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেছি স্থানীয় জনসাধারণকে সাথে নিয়ে কাজ করার জন্য।