রাকিবের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে খুলনা, মায়ের বিলাপ থামছে না

খুলনা প্রতিনিধি: শিশু রাকিব (১২) হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন এলাকাবাসী। দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছির বের করছে সাধারণ জনতা। তাদের দাবি হত্যাকারীদের বিচার করে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে দলমত নির্বিশেষে মানুষ আসছেন রাকিবের বাড়িতে। অনবরত বিলাপ করছেন রাকিবের মা লাকী বেগম।

Rakib mother-1
শিশু রাকিবের মা লাকী বেগমের কান্না থামছে না।

সরেজমিন মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, রাকিবের বাড়িতে সমব্যথী মানুষের ভিড়। মানুষের চাপে টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আসামিদের ফাঁসির দাবিতে ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা।

নাগরিক সমাজের নেতা মহেন সেন বলেন, পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু রাকিবকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছে।

protest people
শিশু রাকিব হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে খুলনা নগরী

রাকিবের বাবা মো. নুর আলম থানায় লিখিত এজাহারে জানান, তিনি তার স্ত্রী লাকি বেগমকে নিয়ে টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডে থাকেন। তার ছেলে রাকিব (১২) ও মেয়ে লিনা (৮)। সংসারের টানাপোড়েন মেটাতে ৪/৫ মাস আগে টুটপড়া শরিফ মটরস সার্ভিসিংয়ে তার ছেলে রাকিব কাজ নেয়। কিন্তু মালিক মো. শরিফ টাকা কম দেওয়ায় সে কাজ ছেড়ে পিটিআই মোড়ে নুর আলম মটরস নামে গ্যারেজে কাজ নেয়।

নতুন কর্মস্থলের হয়ে রাকিব রং কিনতে সাইকেলযোগে বের হয়। পুরানো কর্মস্থলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মো. শরিফ তার সাইকেল টেনে ধরে। এরপর তাকে ভেতর নিয়ে গিয়ে মলদ্বারে হাওয়া দেওয়া চিকন নল (পাইপ) ঢুকিয়ে দিয়ে হাওয়া ছেড়ে দেয়। এ সময় আসামি মন্টু খান রাকিবকে জাপটে ধরে। ফলে হাওয়া ঢুকে রাকিবের পেট, মুখ দেহ বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। এ সময় রাকিবের চিৎকারে আশপাশের লোক এসে রাকিবকে উদ্ধার করে প্রথমে খুলনা সদর হাসপাতাল, পরে একটি ক্লিনিক ও সর্বশেষ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাকিবের দেহে যখন হাওয়া দেওয়া হচ্ছিল তখন ঘরে বসে মো. শরিফের মা বিউটি বেগম হাসছিল।

এলাকায় রাকিবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী মো. শরিফ এবং মিন্টু খানকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ মো. শরিফের মা বিউটি বেগমকেও থানায় নিয়ে আসে। মঙ্গলবার সকালে আটক হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মো. নুর আলম।

রাকিবের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এলাকাবাসী জানান, রাকিব ভদ্র এবং শান্ত ছেলে। ১২ বছর বয়সে রোজগার করে সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি পড়ালেখা করত।

সকালে রাকিব হত্যার খবর পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক খুলনা-২ আসনের এমপি মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সংসদ সদস্য মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি, বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ রাকিবদের বাড়িতে আসেন। সমবেদনা প্রকাশ করে তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।

খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকুমার বিশ্বাস জানান, এজাহারভুক্ত আসামি তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আলামত স্বরূপ হাওয়া মেশিন পাইপসহ জব্দ করা হয়েছে। দ্রুতই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।

সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এটিই আমাদের চাওয়া।’