প্রতিনিধি, খুলনা: পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার শিশু রাকিব হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বিউটি বেগম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে মহানগর হাকিম আয়েশা আক্তার মৌসুমীর আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, স্বীকারোক্তিতে বিউটি কী কী তথ্য জানিয়েছেন কাগজপত্র হাতে না আসা পর্যন্ত তা তিনি জানাতে পরবেন না।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রিমান্ডের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক ঘাতক শরীফের মা বিউটি বেগম। ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলেও বার বার দাবি করেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়েও তিনি কিছু দেখতে পাননি বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান। তবে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেন তিনি। এ সময় তিনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ডেপুটি কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে বিউটি বেগম হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা মহানগর হাকিম ফারুক ইকবালের আদালতে বিউটি বেগমের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই কাজী মোস্তাক আহমেদ আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানান। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে তাকে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এ সময় বিউটি বেগমের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি।
মামলার অপর দুই আসামি গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খান খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কাজী মোস্তাক আহমেদ জানান, তারা সুস্থ হলে তাদেরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
৩ আগস্ট বিকেলে মোটরসাইকেলের হাওয়া দেওয়া কমপ্রেসার মেশিনের পাইপ দিয়ে শিশু রাকিবের পায়ুপথে ঢুকিয়ে তার পেটে হাওয়া দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নগরীর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের মোটরসাইকেল গ্যারেজ শরীফ মোটর্সের মালিক শরীফ, তার মা বিউটি বেগম এবং সহযোগী মিন্টু মিয়াকে ক্ষুব্ধ জনতা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। এরমধ্যে বিউটি বেগমকে বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এর আগে কেএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, রাকিব হত্যাকাণ্ডটি পরিষ্কার হয়েছে। সব আসামিই ধরা পড়েছে। প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন থাকা বাকি আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর এ মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে। এ মাসের শেষে চার্জশিট প্রদান করা হতে পারে। এছাড়া মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে পাঠিয়ে বিচার দ্রুত শেষ করা হবে।