শেরপুর থেকে রেজাউল করিম বকুল: শেরপুর গারো পাহাড়ের কৃষকরা চলতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ে করলার চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছে। এতে বদলে যাচ্ছে আদিাবাসীসহ ওই এলাকার কৃষকদের ভাগ্য। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। গারো পাহাড়ের এসব জমি আগে পতিত ছিল। এখন সেখানে চাষ হচ্ছে সবজি। তবে এর মধ্যে করলার চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখা দিয়েছে।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর সীমান্ত জুড়ে গারো পাহাড়। এসব গারো পাহাড়ে কর্ণজোড়া, মেঘাদল, বাবেলাকোনা, চান্দাপাড়া, হারিয়াকোনা, দিঘলাকোনা, দার্শিকোনা, মালাকোচা, বালিজুরি, খ্রিষ্টানপাড়া, কুচপাড়া, খারামোরা ও অফিসপাড়াসহ ২০/২২টি গ্রামে প্রায় অর্ধ লাখ লোকের বসবাস। এদের মধ্যে আদিবাসীদের সংখ্যাই বেশি। এসব আদিবাসীরা হচ্ছে গারো, কুচ, হাজং, বানাইসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক। আগে গারো পাহাড় ছিল পতিত। আদিাবাসীসহ এলাকার কৃষকেরা বছরের বেশিরভাগ সময় ছিল বেকার। অভাব অনটনে দিন কাটাতো তাদের। ক’বছর যাবত পাহাড়ের পতিত জমিতে চাষ করছে করলা, বেগুন, শষা, টমেটো,মরিচ, পেঁয়াজ, রশুন, আদা, হলুদ, পেঁপে, কলা, জিঙ্গে, কদু শিমুল আলুসহ বিভিন্ন সবজি। এর মধ্যে বেশি হচ্ছে করলার চাষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এফএম মোবারক আলী জানান, উপজেলায় প্রায় ৮শ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। তন্মধ্যে গারো পাহাড়ে প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে হয়েছে করলার চাষ। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সার বীজ সময়মতো পাওয়ায় করলা চাষে ভালো ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছি। এমনকি করলার মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে নিধন করা হচ্ছে। ফলে এবার করলা ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০ টন করে করলা উৎপাদন হচ্ছে। করলা চাষে বেশি ফলনে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটেছে খুশির ঝিলিক।
কৃষক ও করলা ব্যবাসায়ীরা জানান, শ্রীবরদী কৃষি অফিস ও এডিপি ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহায়তায় গারো পাহাড়ে কৃষকেরা করলা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এবার বাজারে করলার দামও ভাল। এবার গারো পাহাড় থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার করলা বিক্রি হতে পারে। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই কমপক্ষে ২০ হেক্টর করে নতুন জমিতে করলার চাষ হচ্ছে।
হারিয়াকোনা গ্রামের কৃষাণী রিছিল ম্রং বলেন, আমাদের আগে তেমন কোনো কাজকাম ছিলনা। বছরের বেশিভাগ সময় বেকার ছিলাম। খুব কষ্ট হতো। এখন করলার চাষ করে সংসার ভালই চলে। তার স্বামী এনথেল মারাক জানান, এবার ৫০ শতাংশ জমিতে করলার চাষ করে প্রায় এক লাখ টাকা লাভ হবে। তার মতে, এলাকার রাস্তাঘাট ভালো হলে আরো বেশি লাভ হতো। উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, কৃষি অফিস থেকে তেমন কোনো তদারকি নেই। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা যদি সঠিক পরামর্শ দেয় তাহলে আরো বেশি ভাল ফলন হবে।
করলা চাষে এলাকার কৃষকদের মাঝে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শ্রীবরদী এডিপি ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর শাখা অফিসের অর্থনৈতিক প্রকল্পের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ জানান, এডিপি থেকে তাদেরকে সার বীজ ও টেকনিক্যাল প্রযুক্তি সহায়তা করে আসছে। এবার তারা প্রায় একশ কৃষককে সহায়তা দিয়েছেন বলে তিনি জানান। এলাকাবাসী ও সচেতন মানুষের প্রত্যাশা, এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন হলে এখানকার কৃষকরা সবজি চাষে পাবে ন্যায্য মূল্য। আরো বিপুল পরিমান পরিত্যক্ত জমিতে হবে সবজির চাষ। দেশে এটিও হতে পারে একটি সবজি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা।