লঞ্চের তালাবদ্ধ কেবিন থেকে প্রবাসীর টাকা-মোবাইল উধাও

প্রতিনিধি, বরগুনা: দ্বিতীয়বারের মতো বরগুনার আমতলী থেকে ঢাকাগামী এমভি হাসান-হুসেন লঞ্চে এক সৌদি প্রবাসী যাত্রীর তালাবদ্ধ কেবিন থেকে লক্ষাধিক টাকা ও মোবাইল চুরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

যাত্রী আব্দুল হক (৪৮) এই প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি শুক্রবার বিকাল ৪টায় বরগুনার পুরাকাটা স্টেশন থেকে হাসান-হুসেন লঞ্চে উঠে দ্বিতীয় তলায় ২১০নম্বর কেবিনে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। আছরের নামায আদায়ের জন্য তিনি কেবিন তালাবদ্ধ করে বাহিরে যান। নামায শেষে এসে ব্যাগ খুলে দেখেন ভেতরে রাখা ৪হাজার ৬’শ রিয়াল অর্থাৎ বালাদেশী টাকার প্রায় এক লক্ষ টাকা এবং ৬০হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল সেট নেই। এরপর তিনি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। কিন্তু লঞ্চের নিরাপত্তা কর্মী এবং কেবিনের সার্ভিস স্টাফরা উল্টা আব্দুল হককেই অভিযুক্ত করছেন বলে তিনি জানান।

সৌদি প্রবাসী আব্দুল হক প্রায় ২৫ বছর ধরে সৌদি আরবে থেকে ব্যবসা করছেন। তার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোডে।

এ ব্যাপারে লঞ্চের সুপারভাইজার মাহমুদ হোসেন বলেন, বিষয়টি তাদেরকেও বিষ্মিত করেছে। খোয়া যাওয়া টাকা ও মোবাইল সেট উদ্ধারের জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং উভয় পক্ষকে তল্লাশী চালিয়েও উদ্ধার করতে পারেননি।

লঞ্চের তৃতীয় তলার অন্য কেবিনে ওই যাত্রীর সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তার আত্মীয় আমেনা বেগম (৪০)। তিনি বলেন, লঞ্চের কেবিন বয়দের মাধ্যমেই চুরি হতে পারে। তা নাহলে কেবিন তালাবদ্ধ অবস্থায় কোনভাবেই চুরি হতে পারে না। এ ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন এবং উল্টা তাদেরকে দায়ী করেন। এরপর শনিবার সকালে লঞ্চ থেকে নেমে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়রি করার জন্য গেলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি বলে আমেনা বেগম অভিযোগ করেন।

ওদিকে এই লঞ্চেই কিছু দিন পূর্বে একই ধরনের আরো একটি ঘটনা ঘটেছিল। ১৮ জানুয়ারি ঢাকা থেকে তালতলীর তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী তোফায়েল হোসেন আমতলীতে আসার উদ্দেশ্যে এমভি হাসান-হুসেন লঞ্চের তৃতীয় তলার একটি কেবিনে ওঠেন। তিনিও একই সময়ে আসরের নামায আদায়ের জন্য কেবিনে তালা দিয়ে বাইরে যান। এসে দেখেন কেবিনে রাখা ৫০হাজার টাকা মূল্যের সনি এক্সপেরিয়া জেড মোবাইল সেটটি উধাও হয়ে গেছে। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেন। এনিয়ে ব্যাপক চাপ প্রয়োগের পরে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরিচয় জানতে পেরে মোবাইলের বিপরীতে জরিমানার টাকা প্রদান করেন।

দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ভ্রমনে বরগুনার আমতলী থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ যাতায়াত ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে বিবেচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অংসংখ্য পর্যটক এবং অন্যান্য যাত্রীরা এই রুটে যাতায়াত করে থাকে। সেখানে বার বার এ ধরনের ঘটনা জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হয়তো লঞ্চের কেবিন বয়দের নিকট কোনও গোপন চাবি থাকতে পারে এবং সেই চাবি দিয়েই এধরনের ঘটনা বার বার ঘটাতে পারে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক পিপিএম বলেন, থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।