শিশু রাহাতকে মেরেই ফেলল অপহরণকারীরা, পাহাড়ি জঙ্গলে মিলল হাড়গোড়

এম. সুরুজ্জামান, শেরপুর: অপহরণের ছয়দিন পর শেরপুরের বিপ্লব-লোপা মেমোরিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির অপহৃত ছাত্র আরাফত ইসলাম রাহাতের (৭) কংকাল উদ্ধার করছে পুলিশ। শনিবার সকালে শেরপুরের পুলিশের একটি দল নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্কের পূর্বদিকে মাজারের টিলা থেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিশুটির কংকাল উদ্ধার করে।

sherpur child deadbody recovered
উদ্ধার অভিযানে পাওয়া গেল রাহাতের হাড়গোড়।

অপহরণের সঙ্গে জড়িত একজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাহাতের মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, অপহরণের দিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে রাহাতকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। মোবাইল ফোনের চার্জারের তার রাহাতের গলায় প্যাঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বত্তরা।

শেরপুরের সিনিয়র এএসপি (সার্কেল) মো. শাজাহান মিয়া জানান, গত ২ আগস্ট রোববার শেরপুর শহরের গৃদানারায়ণপুর এলাকার বাসার কাছ থেকে শিশু রাহাতকে অপহরণ করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। গত ৫ আগস্ট ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রাহাতের খালুসহ চারজনকে গ্রেফতার হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আসলামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে সাথে নিয়ে শনিবার পুলিশ গারো পাহাড়ের গহীন বনে অভিযান চালিয়ে রাহাতের মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে।

Rahat killed for ransom
রাহাত, লোভী মানুষের নির্মমতায় ঝরে যাওয়া আরেকটি প্রাণ।

অভিযোগের পর পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত শেরপুর সদর উপজেলার বয়ড়াপরাণপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে এবং অপহৃত শিশুর খালু মো. আব্দুল লতিফ (২২), একই গ্রামের লতিফের বন্ধু ফারক মিয়ার ছেলে রবিন (২০) এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ইমরান হাসান (২১) এবং শেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র আসলামকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসলামকে সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ পাহাড়ের জঙ্গল থেকে অপহৃত শিশু আরাফত ইসলাম রাহাতের কংকাল উদ্ধার করে।

পুলিশ ও স্থানাীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন স্কুল থেকে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে  রাহাত ফার্নিচার ব্যবসায়ী বাবা শহীদুলের দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এসময় তার হাতে একটি মোবাইল ছিল। বিকেলে শিশুটি মোবাইল ফোনে তাদের পরিচিত এক যুবকের বরাত দিয়ে জানায়, ওই যুবক তাকে শহরের দারোগা আলী শিশু পার্কে বেড়াতে নিয়ে এসেছে। এর কিছুক্ষণ পর ওই যুবক  রাহাতের বাবা খোকনকে জানায়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে।

এসময় রাহাতের বাবাকে শর্ত দেওয়া হয়, ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। বিষয়টি পুলিশ এবং সাংবাদিকদের জানানো যাবে না বলে তাদের সাবধান করে দেওয়া হয়। টাকা দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায় অপহরণকারীরা।

ঘটনাটি গোপন রেখে শিশু রাহাতের বাবা অপহরণকারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তারা ধরা না দেওয়ায় পরদিন ৩ আগস্ট সোমবার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে শেরপুরের এএসপি (সার্কেল) শাজাহান মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শিশুটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে।