প্রতিনিধি, বরগুনা: সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার একটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় ওই বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ ঘটনার পর প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে অবস্থিত বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক স্কুল শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বাদলকে আটক করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মাদ ইব্রাহীম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষার তৃতীয় শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের ফাঁস হওয়া একটি প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসকের হাতে আসে। ওই প্রশ্নপত্র নিয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী ইউএনও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অভিযান চালান। অভিযানে বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে ৭৯টি বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ নোট বই উদ্ধার করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে এসব বই পুড়িয়ে ফেলা হয়। আদালত কোচিং সেন্টারটি সিলগালা করে দেন। এছাড়াও ওই কোচিং সেন্টারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম বাদলকে প্রাথমিকভাবে আটক করা হলেও সরাসরি কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় সন্ধ্যায় মুচলেকা নিয়ে সাময়িকভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইউএনও আরো জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি জহিরুল ইসলাম বাদলের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জহিরুল ইসলাম বাদল বরগুনা সদর উপজেলার রোডপাড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে বিজয় কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে রমরমা কোচিং বাণিজ্য করে আসছেন। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পালাক্রমে শতাধিক শিক্ষার্থীকে এই কোচিং সেন্টারে পড়ানো হয়। এর আগেও বাদলের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিশু নির্যাতন সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রভাবশালীদের ছেলে-মেয়েরা তার কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রী। এসব কারণে নিজেও অনেকটা প্রভাবশালী। বাদল তার কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পরীক্ষার আগের দিন বিতরণ করেন। বাদলের কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে সেই প্রশ্নপত্র প্রশাসনের হাতে চলে যায়।
গত বছরের ৫ মে বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে চরকলোনী হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নওশিন হোসাইন সুবাহ নামের এক শিক্ষার্থীকে অন্ধকার টয়লেটে আটকে মানসিক নির্যাতন করেন এই শিক্ষক। এঘটনায় ওই সময়ে অভিভাবকদের নিকট ক্ষমা চেয়ে বিষয়টির মীমাংসা করেন।
জহিরুল ইসলাম বাদল জানান, তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং এটা একটা ষড়যন্ত্র বলে তিনি দাবি করেন।
বিজয় কোচিং সেন্টারের সামনে অবস্থিত এফ এম স্কুলের পরিচালক আব্দুল আলীম হিমু বলেন, বিজয় কোচিং সেন্টারটি প্রতিবছরই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তিনি একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন কিন্তু নিয়মিত পাঠদানে অংশগ্রহন করেন না। তাকে বরগুনা থেকে বদলি করে অন্যত্র পাঠানো প্রয়োজন।
সানবীম কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম নেছার বলেন, বিজয় কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীরা সব সময়ই এতো ভালো রেজাল্ট করে থাকে যা সবাইকে অবাক করে দেয়। আড়ালের বিষয়টি আজ বেরিয়ে এসেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরজাহান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ বার বার আসছে। কিন্তু আমরা একটা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। তদন্তের পরে প্রমাণ অনুযায়ী অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।