মিলন কর্মকার রাজু , কলাপাড়া (পটুয়াখালী): সকাল ১১টা। হাতে ফুল, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন কুয়াকাটাগামী শিববাড়িয়া নদীর উপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতুর দুই পাড়ে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা হাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতুর বিভিন্ন স্থানে। ছুটে এসেছেন গ্রামের বউ-ঝিরা। সেতুর নিচে শিববাড়িয়া নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ও ছোট নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেতুতে পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি। উৎসবমুখর সুশৃঙ্খল অপেক্ষা চলতে থাকে উপস্থিত মানুষদের।
সকাল ১১টা ২৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত শেখ রাসেল সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে সব বয়সের মানুষ। বাঁশি, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সাগরপাড়ের মানুষ আজ (বৃহস্পতিবার) জানান দেয় তাদের আনন্দের।
সেতুটির অভিষেক দেখতে এসেছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আনিস। এক ক্লাস করেই স্কুল পালিয়ে এসেছে সে। অানিস জানাল, আইজ হইতে আমাগো আর খেয়া পার হইতে হইবে না। এইহানে সবাই আইছে, হেইয়া দ্যাখতে আমিও আইছি। এখানকার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসার দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী ছুটে আসে সেতুটির উদ্বোধন দেখতে।
সত্তরের জলোচ্ছ্বাস ও একাত্তরের নৃশংশতা দেখেছেন কুলসুম বিবি। বয়স প্রায় ৭০ ছুঁই ছুঁই। হাতে লাঠি। তারপরও প্রায় দেড় মাইল হেঁটে শেখ রাসেল সেতুর উদ্বোধন দেখতে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, আগে এইডা কতো বড় নদী ছিলো (শিববাড়িয়া নদী), এ্যাহন তো খাল হইয়া গ্যাছে। আমরা এই নদী হাতরাইছি। আইজ এইহানে সেতু হইছে শেখ সাহেবের পোলার নামে। হেইয়ার লাইগ্যা দ্যাখতে আইছি।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সঙ্গে সংযুক্ত হলেও টেলিভিশন-মোবাইল ব্যবহার করে তা প্রত্যক্ষ করেছে সাগরপাড়ের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই উৎসবে মেতে ওঠে উপস্থিত মানুষেরা। একে অপরকে মিষ্টিও খাইয়ে দেয়। উদ্বোধন ঘোষণার পরই সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়েছে।
২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪০৯ মিটার দীর্ঘ সেতুর প্রস্থ ফুটপাতসহ সোয়া ১০ মিটার। কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের ৬৬তম অংশে শিববাড়িয়া নদীর উপর নয়টি স্পামের উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
কুয়াকাটাগামী সড়কে শেখ কামাল ও শেখ জামাল সেতুর কাজও এখন শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বর মাসে শেখ কামাল সেতুর উদ্বোধন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।