সোমেশ্বরীর কূল উপচে পানির নিচে শেরপুরের ৪০টি গ্রাম

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী এবং শ্রীবরদী  উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দু উপজেলায় অন্তত ৪০টি গ্রাম বন্যাকবলিত।

সোমেশ্বরী নদীর বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতীর ধানশাইল বাজার ও আশপাশের এলাকা হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধানশাইল হাইস্কুল মাঠ এখন বুক সমান পানির নিচে।

বন্যাকবলিত এলাকার ৫০টি পরিবার তাদের আসবাবপত্র ও গবাদিপশুসহ ধানশাইল হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় ক্লাস  বন্ধ রয়েছে। পানিতে তলিয়ে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

ঝিনাইগাতীর প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

sherpur flash flood 2
ঝিনাইগাতীর ধানশাইলে ঢলের তোড়ে ভেঙে যাওয়া বসতঘর।

ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে উজান থেকে হু হু করে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে অনেক ঘরবাড়ি, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেক পরিবার ধানশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বন্যার বিষয়ে জানিয়েছি।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কোরবান আলী জানান, ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান। বর্ষণ ও উজান থেকে পানি আসা অব্যাহত থাকলে আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী সিংগাবরুনা, রানীশিমুল, কাকিলাকুড়া ও তাতিহাটি  ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দিসহ নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। রাস্তঘাট ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন গরু-মহিষসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভায়াডাঙ্গা বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দোকানিরা দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীর পানি দু কূল উপচে ফসলের মাঠ, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত করেছে। বকচর গ্রামের মৎস্য খামার মালিক দেলোয়ার বলেন, ১৫ একর জমিতে মাছের খামার করেছি। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হালুহাটি গ্রামের মোস্তফা বলেন, ৪০ একর জমিতে চারটি পুকুর করে মাছ চাষ করেছি, বন্যার পানিতে এসকল পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এফএম মোবারক আলী জানান, ১৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে, এর মধ্যে বন্যায় ৩ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে।
(প্রতিবেদন: হাকিম বাবুল, রেজাউল করিম ও এম সুরুজ্জামান)