প্রতিনিধি, খুলনা: পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে শিশু রাকিব (১২) হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক কাজী মোস্তাক আহমেদ। এজাহারভুক্ত তিন আসামি শরীফ, তার মা বিউটি বেগম এবং চাচা মিন্টু মিয়াকে অভিযুক্ত করে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম এল এম ডি মেছবাহ উদ্দিনের আদালতে ১৯০ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়।
মামলার পরবর্তী তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে এই প্রথম দ্রুত সময়ে (২২দিনে) হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হলো।
চার্জশিট দাখিলের আগে বেলা ১১টায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরে চার্জশিট দাখিল সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি। এ সময়ে রাকিবের মা-বাবা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি মেট্রোপলিটন পুলিশের কল্যাণ তহবিল থেকে রাকিবের মা-বাবার হাতে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
এ সময়ে পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, সারা বিশ্বে মানুষ বিভিন্নভাবে হতাকাণ্ডের শিকার হয়। তবে শিশু রাকিবের হত্যাকাণ্ড ব্যতিক্রম। এরকম নজির পৃথিবীতে নেই। শুরু থেকে মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। যে কারণে দ্রুত চার্জশিট প্রদান সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘটনার পর থেকে কেএমপি বা পুলিশের অন্য কোনো কাজে নিয়োজিত না করে শুধু এই মামলার তদন্ত করতে দেয়া হয়। তাছাড়া কেএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। এমনকি পুলিশ কমিশনার প্রায় প্রতিদিন নিজেই এই মামলা মনিটরিং করেন। মামলার সর্বমোট ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। কেএমপি কমিশনার আরো বলেন, বিচারকার্য শুরু হওয়ার পর মামলাটি যাতে দ্রুত বিচার মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে কেএমপি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এ মামলার শেষ অবধি পর্যন্ত সাক্ষী হাজির করা থেকে অন্যান্য সকল নিরাপত্তা প্রদান করবে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী মোস্তাক আহমেদ জানান, এজাহারভুক্ত তিন আসামি শরীফ মটরস-এর মালিক মো. শরীফ, মিন্টু খান ও বিউটি বেগমকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে তিনি আরো জানান, অন্য গ্যারেজে কাজ নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েই শিশু রাকিবকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ইতোমধ্যে আদালতে মামলার প্রধান আসামি শরীফ, মিন্টু খান ও শরীফের মা বিউটি বেগম জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও ঘটনাস্থলে শিশু রাকিবের ওপর নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে মোট ৪০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
৩ আগস্ট বিকেলে শরীফ মোটরস-এ মোটরসাইকেলে হাওয়া দেওয়া কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে শিশু রাকিবের পায়ুপথে হাওয়া ঢোকানো হলে অতিরিক্ত বায়ুর চাপে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাকিবকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
রাকিবকে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শরীফ ও মিন্টু মিয়াকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ক্ষুব্ধ জনতা। পরে শরীফের মা বিউটি বেগমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরদিন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম বাদী হয়ে তিনজনের নামে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (নং ০৪)। গ্রেফতার তিনজনই খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
রাকিবকে হত্যার পর খুলনাসহ সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এমনকি শিশুরাও প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ মিছিল, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।