সর্বরোগহর কার্ডচক্রের লাখ লাখ টাকার প্রতারণা

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): ১৫০ টাকায় কার্ড করলে সব রোগের চিকিৎসা দেয়া হবে। গ্রামের সাধারণ মানুষকে এভাবে বুঝিয়ে এক হাজার ৭৬টি হেলথ কার্ড বিক্রি করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে দেড় লক্ষাধিক টাকা। এ কার্ড বিক্রির জন্য ৫৬ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। এজন্য তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি নেয়া হয় সাড়ে চার হাজার টাকা করে আড়াই লক্ষাধিক টাকা। বিনা পুঁজিতে টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশন নিয়ে চার মাস আগে কলাপাড়ায় কাজ শুরু করা স্বনির্ভর বাংলাদেশ হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী গীতা নন্দীকে পুলিশ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার ওই প্রতিষ্ঠানের কলাপাড়া শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয় দেয়া গীতাকে গ্রেফতারের পরই বের হয়ে আসে এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রতারণার কথা।

kalapar health card scandal
গীতা নন্দী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে গ্রাম ঘুরে ঘুরে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ আটটি রোগের চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হেলথ কার্ড বিক্রি শুরু করে ওই প্রতিষ্ঠানটি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি ৫৬ জন নারী কর্মী নিয়োগ দেয়। তাদের চাকুরি সরকারিকরণের কথা বলে জনপ্রতি সাড়ে চার হাজার টাকা করে জামানত নেয়। কারো কারো কাছ থেকে দশ হাজার টাকাও নেয়া হয়। মানুষ যাতে সন্দেহ না করে এজন্য কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর বন্দরে ও পৌর শহরের নাচনাপাড়ায়  অফিস ভাড়া নেয়।

মাঠকর্মী সনিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়ার লোভনীয় প্রস্তাবে সহজ-সরল মানুষ আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু কর্মীরা বেতন না পাওয়ায় কোন্দল শুরু হয় সংগঠনের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে। এমনকি স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক গীতা নন্দী মাঠকর্মীদের চাকরি সরকারের রাজস্ব খাতের আওতায় যাবে এমন প্রচার চালিয়ে তাদের একেরপর এক প্রলোভন দেখাতে থাকেন।

চম্পাপুর ইউনিয়ন মাঠকর্মী রাশেদুল ইসলাম ও টিয়াখালীর মো. মিলন জানান, প্রলোভনে পড়ে তারা হেলথকার্ড বিক্রি করেন নিজ  খরচে। কিন্তু বেতন চাইলেই শুরু করে টালবাহানা।

হেলথকার্ডে দেখা যায়, সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা লেখা রয়েছে, হাউস নম্বর-৫২৩, থার্ড ফ্লোর, রোড নম্বর-১০, বারিধারা, ডিওএইচএস, ক্যান্টনমেন্ট ঢাকা। গভঃ রেজিঃ নং সি ১১৯৭৪৯/১৪।

পুলিশ জানায়, গীতা নন্দীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ পৌরসভায়। এ প্রতারণার ঘটনায় সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার মজিবুর রহমান, চেয়ারম্যান জসিম ভূঁইয়াসহ স্থানীয় দুই দালালসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে কলাপাড়া থানায় গতকাল একটি মামলা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত গীতা নন্দী সাংবাদিকদের জানান, স্বাস্থ্য সেবার জন্য তারা ইতোমধ্যে স্যালাইনসহ কিছু ওষুধ বিতরণ করেছেন।

কলাপাড়া থানার ওসি মো.আজিজুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গীতা নন্দী  সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এজন্য এক মাঠকর্মীর মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংস্থার ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করলেও কাউকেই পাওয়া যায়নি। তবে কতো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি তার সঠিক তথ্য এখনো বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে মাঠকর্মীদের মতে, প্রায় এক কোটি টাকা চার মাসে হাতিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ডা. লোকমান হাকিম জানান, স্বনির্ভর বাংলাদেশ হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামের কোনো সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে এমন খবর তার জানা নেই।