কেপিপিএল-এর ৭৬ এলসির সন্ধানে খুলনায় তদন্তদল, সহযোগিতা না করায় গুদাম সিলগালা

প্রতিনিধি, খুলনা:  ৭৬ এলসির তথ্য সন্ধান করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তদন্ত টিমকে সহযোগিতা না করায় খুলনা প্রিন্ট্রিং এ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল) এর বন্ডেড ওয়্যার হাউস (শুল্কমুক্ত গুদাম) সিলগালা করে দিয়েছে মংলা কাস্টম হাউস।

মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার ড. মোহাম্মদ আল-আমিন প্রামানিক সিলগালা করার কথা স্বীকার করে জানান, শুল্ক আইনের ১৩/৩ ধারা মোতাবেক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা হিসেবে গুদাম সিলগালা করেছে। কেপিপিএল লকপুর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এটার চেয়ারম্যান বহুল আলোচিত এস এম আমজাদ হোসেন।

মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার ড. মোহাম্মদ আল আমিন প্রামানিক জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেপিপিএল-এর ৭৬টি এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) সন্ধান করতে এনবিআর সাত সদস্যর তদন্ত টিম গঠন করে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুসাইন আহমেদ এই টিমের আহবায়ক। তদন্ত টিমের পাঁচ সদস্য খুলনার রূপসায় কেপিপিএল-এর প্রধান কার্যালয়ে আসেন ২৫ আগস্ট। তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ও গুদাম দেখতে চান। কেপিপিএল সব কাগজপত্র দেখাবে বলে নিশ্চিত করে তদন্তদলকে ২৬ আগস্ট বুধবার আসতে বলে। তদন্তদল র‌্যাব-৬ ও রূপসা থানা পুলিশের সহয়াতা নিয়ে ২৬ আগস্ট সকাল নয়টা থেকে রাত পর্যন্ত কেপিপিএল-এ অবস্থান করেন। কিন্তু এই সময় প্রতিষ্ঠানে কেউ ছিল না এবং গুদামে তালা লাগানো ছিল। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বুধবার রাত ৯টার দিকে মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেন। কাস্টম কমিশনার আরো জানান, তাদের কাছে রক্ষিত খাতাপত্র অনুসারে কেপিপিএল-এর গুদামে তিন হাজার মেট্রিক টন শুল্কমুক্ত পণ্য রয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও এনবিআরের তদন্ত টিমের আহবায়ক হুসাইন আহমেদ জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৭৬ এলসির সন্ধান করতে তারা খুলনা এসেছেন। তিনি জানান, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বিধায় তিনি মিডিয়ার সাথে  এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারছেন না। তবে তিনি কেপিপিএল-এর অসহযোগিতার কথা স্বীকার করেন। বলেন, তাদের পক্ষ হতে আদালতকে বিষয়টি জানানো হবে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল তথ্য আদালতকে জানাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ৭৬টি এলসির মধ্যে ১১টি এলসির পণ্য এসেছিল বেনাপোল বন্দর হয়ে আর বাকি ৬৫টি এলসির পণ্য আসে চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে। তবে এই এলসিতে কী পরিমাণ অর্থ তা এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ১৪ জুলাই এক আদেশে ৭৬টি এলসির সঠিক তথ্য নিরূপণ করতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশে বলা হয়, ২৬ জুলাই থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য আদালতকে জানাতে হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) বলছে,৭৬টি এলসির তথ্য তাদের কাছে নেই। তারা আরো জানান, ৭৬টি এলসির পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কেপিপিএল-এর বন্ড লাইসেনস নবায়ন করা ছিল না। পরে নবায়ন করে পণ্য খালাস করা হয়েছিল। তবে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে এই খালাস হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শুল্ক বিভাগে ব্যাপক ধূম্রজাল সৃষ্টি হলে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দেন।

এর আগে গত বছর নভেম্বরে লকপুর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মুন স্টার পলিমার ঘোষণার তিনগুণ বেশি টাইলস আমদানি করায় এস এম আমজাদ হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে ৩০ লাখ টাকা জরিমানাসহ প্রায় চার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়। লকপুর গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এস এম আমজাদ হোসেন খুলনায় নানাভাবে আলোচিত। তিনি সম্প্রতি অনুমতি পাওয়া একটি ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছিল। বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি করে ওজন কম দেয়ায় মৎস্য বিভাগের মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর বিদেশে দেশের সুনাম নষ্ট করার জন্য খালিশপুর থানায় এস এম আমজাদ হোসেনকে আসামি করে মামলা করেছিল।

খুলনা প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং লি: এর নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেন তাদের প্রতিষ্ঠানে র‌্যাব-পুলিশ নিয়ে অভিযানের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে ৭৬ এলসির নথিপত্র পর্যালোচনা করতে। কিন্তু তদন্ত টিম র‌্যাব-পুলিশ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি স্বীকার করেন, তাদের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। সিলগালায় উল্লেখ করা হয়েছে আদালতের নির্দেশে সিলগালা, অথচ আদালত সিলগালা করার কোনো নির্দেশ দেননি।