রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): কাউখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন মল্লিক (৩০) অপহৃত হয়েছেন এমন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাগেরহাটের পুলিশ খানাজাহান আলী মাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে।
২৫ আগস্ট মঙ্গলবার বাগেরহাট পুলিশ ‘অপহৃত’ সুমনকে আটক করার পর তাকে পিরোজপুর সদর থানায় হস্তান্তর করেছে।
সুমনের বোন লুনা বেগম তার ভাই অপহৃত হয়েছেন এমন একটি অভিযোগ এনে ৯ আগস্ট ১১ জনকে আসামি করে পিরোজপুর আদালতে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটিকে ‘সন্দেহজনক’ বলে অভিহিত করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, কাউখালী উপজেলার বেতকা গ্রামের মৃত হাসেম আলী মল্লিকের ছেলে সুমন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। সুমন মল্লিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী, চুরি, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আট বছর পলাতক থাকার পর গত ১৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ পুলিশ তাকে ঢাকার দুটি মামলায় আটক করে। পরে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সুমনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০০৭ সালে সন্ত্রাস ও চুরি এবং ২০০৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ঢাকার লালবাগ থানায় মামলা দুটি দায়ের হয়েছিল।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, সুমন এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে চাঁদা দাবি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। তার কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী সবসময় আতঙ্কে থাকত। বেতকা গ্রামের প্রবাসী দুলাল খাঁর স্ত্রী হনুফা বেগমের কাছে মোবাইল ফোনে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেয়ে হনুফাকে জীবননাশের হুমকি দেয় সুমন মল্লিক। এ ব্যাপারে হনুফা বেগম সুমনের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল কাউখালী থানায় একটি জিডি করেন। সুমন একই এলাকার ব্যবসায়ী আবু সাঈদের কাছ থেকেও বিভিন্ন সময় চাদাঁর দাবি করে আসছে । চাঁদা না পেয়ে ভয়ভীতি দেখানোসহ জীবননাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সুমনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন জানান।
সুমনের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণখান থানায় ৭ ও ১১ এপ্রিল সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এতে সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে তার বোন লুনা বেগমকে দিয়ে ৯ আগস্ট পিরোজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাজানো অপহরণ মামলা দায়ের করান বলে জানা যায় । মামলায় উল্লেখ করা হয় যে, ২৯ জুলাই পিরোজপুর আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসার পর ব্যবসায়ী আবু সাঈদ হাওলাদারসহ ১১ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জন মিলে তার ভাই সুমন মল্লিককে দুপুর দেড় টার দিকে দুপপাশা স্থান থেকে মামলা মীমাংসা করার কথা বলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে খোঁজখবর না পেয়ে অপহরণের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন লুনা।
উল্লেখ্য, ২৯ জুলাই পিরোজপুর আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর সুমন নিখোঁজ হয় বলে তার পরিবার দাবি করে। লুনা বেগম পিরোজপুর সদর থানায় ৩ আগস্ট একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। পরে ৯ আগস্ট তিনি আদালতে মামলা করেন।
সুমনের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পিরোজপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মাসুমুর রহমান বিশ্বাস জানান, বাগেরহাট থানা পুলিশ সুমনকে আটক করে পিরোজপুর থানায় হস্তান্তর করেছে। সুমন অপহৃত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক।