জমজমাট কাউখালীর ধানের চারার ভাসমান হাট

রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): উপকূল অঞ্চলের সর্ববৃহৎ আমন চারার ভাসমান হাট আজ শুক্রবার কাউখালী শহরের সন্ধ্যা নদীতীরে শুরু হয়েছে। কাউখালী শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার চিরাপাড়া নদীতে সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার বসছে আমন চারার ভাসমান হাট। আগামী তিন সপ্তাহ  সারা উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা আমন চারা সংগ্রহ করতে কাউখালীর ভাসমান হাটে জড়ো হবেন।

উপকূলের কৃষকদের এখন আমন চাষ নিয়ে ব্যস্ততা। এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে কয়েক দফা অবিরাম বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ায় বীজতলার মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে উপকূলের অনেক কৃষকের আমনের বীজতলা নষ্ট হয়। এছাড়া অনেক কৃষক নানা সংকটে সময়মত বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। প্রতিবছর এ মৌসুমে  আমন চারা সংগ্রহ করতে বহু কৃষক পিরোজপুরের কাউখালীতে আমন ধানের ভাসমান আমন চারার হাটে আসেন। এ হাট থেকেই কৃষকরা আমন চারা সংগ্রহ করেন।

kawkhali floating rice sapling selling
ভাসমান হাটে নৌকায় করে এসেছে ধানের চারার চালান।

শুক্রবার আমন ধানের চারার বিক্রয়ের এ হাটে কয়েক লাখ টাকার আমন চারা বিক্রয় হয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

কাউখালী এলাকার জমি অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উঁচু বলে এখানে জলাবদ্ধতায় বীজতলা নষ্ট হয়নি। শতবছর ধরে এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমন বীজতলা তৈরি করেন। উপকূলে আমন চারার এটাই বড় উৎস।

এখানে পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মাদারীপুরের কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ীরা নৌকা ও ট্রলারে করে এ হাটে চারা কিনতে আসছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাউখালী অঞ্চলের মাঠ অন্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক উঁচু। ফলে জলাবদ্ধতাও কম। কৃষকরা বীজতলা করে সফলতার মুখ দেখছেন। এখানে যুগ যুগ ধরে ধান বীজ বিক্রয়ের বাণিজ্যিক বাজার গড়ে উঠছে। এখানে উৎপাদিত ধানের চারার মানও ভালো। তাই বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এ হাট হতে চারা সংগ্রহ করছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার পরও এখানে ভালো ধানের চারা উৎপাদন হয়েছে। এ কারণে ভাসমান আমন চারার হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম ঘটেছে।

উপজেলার জয়কুল গ্রামের কৃষক এনায়েত জানান, শুক্রবারের ভাসমান চারা হাটে ৮০ গণ্ডা (মুঠি) বা একপণ আমন চারা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বিক্রয় হয়েছে। এ চারা আবার অন্য অঞ্চলে আরো বেশি দামে বিক্রয় করা হবে।

গত আমন মৌসুমে কাউখালীতে ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলায় চারা লাগানো হয়েছিল। ওই বছর অতিবর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে প্রায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমির বীজতলা ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হয়। তবে এ মৌসুমে স্থানীয় আমন ও উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের আমন মিলিয়ে ৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করে কৃষক। এর মধ্যে উফশী ১৮০ হেক্টর আর স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ২০০ হেক্টর। টানা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার পরও এবার এখানে ধানের চারার উৎপাদন ভালো হয়েছে। পরিপুষ্ট চারায় এবার কৃষকরা ভালো ফলনের আশা করছেন।

কাউখালী উপজেলায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বীজ স্থানীয় কৃষক ক্রয় করে চাহিদা মিটায়। বাকি ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বীজ বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পাইকারি ক্রয় করে নিয়ে যায়।

ঝালকাঠির রাজাপুরের শুক্তগর গ্রামের কৃষক শাহ জামাল গ্রামের বলেন, গত মৌসুমে ৮০ গণ্ডা চারা সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা করে বিক্রয় হয়েছিল। এবার সারা এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায সংকট দেখা দেয়। এতে চারার মূল্য চড়া।

কাউখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অর্পূব লাল সরকার বলেন, এবার উপকূলীয় অঞ্চলে আমন চারার সংকট চলছে। তবে কাউখালীতে এ সংকট নেই । এখানে এবার ভালো চারা উৎপাদন করেছেন কৃষক। তাছাড়া এখানে বাণিজ্যিকভাবেই কৃষক আমন চারা উৎপাদন করছেন। ফলে কাউখালীতে গড়ে উঠেছে আমন ধান চারার ভাসমান বাজার।