রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর: পাতিল চুরির অভিযোগে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের কৃষক বাচ্চুর মিয়ার ছেলে আলম (২১) এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের ভিডিওচিত্রসহ সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আলমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে না দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে–এ প্রশ্ন সবখানে। তার পরিবার দাবি করেছে যে, চেয়ারম্যানের নির্যাতনেই আলমের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও আলমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এ অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন।
গত ১৩ আগস্ট আলম রানীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা দক্ষিণপাড়ায় তার নানা রাজা মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে পাতিল চুরির অভিযোগ এনে এলাকার কয়েকজন তাকে আটক করে। পরে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সালিশ বসে। রানীশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান আবুসামা কবির পাতিল চুরির অপরাধে আলমকে দোষী সাব্যস্ত করে তার ওপর নিজেই বেত দিয়ে পেটাতে থাকেন। সালিশ শেষে আলমের আত্মীয়স্বজন তাকে নিতে এলে আলমকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার কথা বলে আটকে রাখা হয়।
পরদিন ভোরে রহস্যজনকভাবে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়ক থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ফুলপুর থানা পুলিশ। পরে ময়না তদন্তের জন্য আলমের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সংবাদ পেয়ে আলমের স্বজনরা ফুলপুর পুলিশের কাছ থেকে তার লাশ নিয়ে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরাস্তানে এনে দাফন করেন।
আলমের বাবা বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে হত্যার অভিযোগ এনে ২৩ আগস্ট আদালতে ইউপি চেয়ারম্যান আবু শামা কবির ও মেম্বার মিল্লাত হোসেনসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য শ্রীবরদীর অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। এদিকে সালিশে আলমের ওপর বেত্রাঘাতের ভিডিওচিত্রসহ সংবাদটি মিডিয়াতে প্রচার হওয়ার পর ঘটনাটি এলাকায় আলোড়ন তোলে। ফেইসবুক ও টুইটারেও প্রকাশিত হয় এই ভিডিওচিত্র। পরে সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর পর মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে শ্রীবরদী থানা।
এ ব্যাপারে রানীশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান আবু শামা কবির জানান, এলাকার লোকজন পাতিল চুরির অভিযোগে আলমকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। পরে ইউনিয়ন পরিষদে এলাকার অনেক লোকের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। এতে সে চুরির ঘটনা স্বীকার করায় তার ওপর কয়েকটি বেত্রাঘাত করা হয়। তিনি বলেন, গণধোলাইয়ের হাত থেকে তাকে রক্ষার জন্যে তার ওপর বেত্রাঘাত করা হয়েছে। তিনি আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সালিশ শেষে আলমকে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন খবর পাই সে মারা গেছে। এ ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে।
আলমের বাবা বাচ্চু মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন জানান, আলমকে মিথ্যা চোর অপবাদ দিয়ে আটক করে। পরে তাকে সালিশের নামে বেদম মারপিট করা হয়। এ সময় সে পানি খেতে চাইলে তাকে পানিও খেতে দেয়া হয়নি। তাদের দাবি, চেয়ারম্যানের নির্যাতনেই আলমের মৃত্যু হয়েছে।
ফুলপুর থানার এসআই আলাউর রহমান মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, আলমের শরীরের ডান হাত ও পা ভাঙাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও পুরুষাঙ্গের নিচে কেটে যায় ও সেখানে বীর্জ লেগে ছিল। তার পকেটে রানীশিমুল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের একটি পরিচয়পত্র ছিল।
ঘটনাটি হত্যা না দুর্ঘটনা তা বলা যাচ্ছে না। তবে মেডিকেল রিপোর্ট এলে এবং সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা সম্ভব হতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন মানুষের মাঝে দাবি ওঠেছে, ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করা। এতে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা।