হাকিম বাবুল, শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার সাপমারী গ্রামে সালিশের সময় নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা পাল্টা নারী নির্যাতন মামলায় তারা শনিবার বিকেলে জামালপুরে তদন্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ওই নারীর ভাই জানিয়েছেন, তারা তদন্তকারী কর্মকর্তা জামালপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মো. মিজানুর রহমানের কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন। একইসাথে তারা তাদের বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন প্রমাণও উপস্থাপন করেন।
গত ২৪ জুলাই ওই নারী পারিবারিক একটি সালিশে নির্যাতনের শিকার হন। এ সময় তাকে নির্যাতনসহ বিবস্ত্র করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। ২৭ জুলাই তিনি শেরপুর সদর থানায় মামলা করেন।
এদিকে, নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
শেরপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার নির্যাতনের শিকার নারীর ভাবী বাদী হয়ে জামালপুর জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল একটি পাল্টা মামলা দায়ের করায় জামালপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বেলটিয়া যুব প্রশিক্ষণ ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মো. মিজানুর রহমান তদন্তকারী কর্মকতা হিসেবে ৫ সেপ্টেম্বর তার অফিসে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করেছেন। বেলটিয়া যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছেই ভিকটিমের ভাবী শ্যামলীর পিতার বাড়ি হওয়ায় তারা সেখানে শেরপুর থেকে হাজির হতে গেলে তাদের ওপর হামলা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করেন। তাদের এই আশঙ্কাকে নিরাপত্তাহীনতা বলে অভিহিত করে কোনো কোনো পত্রিকায় সংবাদ এসেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা কোনো নিরাপত্তাহীনতায় নেই। শেরপুর জেলা পুলিশ বিভিন্ন সময় খোঁজখবর নিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
প্রেস বিজ্ঞাপ্তিতে ঘটনার বর্ননা দিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৪ জুলাই বিকেল অনুমান তিনটার দিকে শেরপুর সদর থানার সাপমারী গ্রামে ভিকটিমের ভাইয়ের বাড়িতে এক ঘরোয়া সালিশ হয়। ওই সালিশে ভিকটিম, তার বড় ভাই, বড় ভাবী, ভাবীর ফুফা জয়নাল আবেদীন হাসি ও তার স্ত্রী শিরিনা বেগম, ভাইয়ের শ্যালক মন্টু মিয়া, মিঠুন ও ভুট্টো মিয়া উপস্থিত ছিলেন। সালিশে ভিকটিম তার বড় ভাইয়ের পক্ষে কথা বলায় একপর্যায়ে ভাবী শ্যামলী বেগমের সঙ্গে তার তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি ও চুলাচুলির ঘটনা ঘটে। এতে ভিকটিমের গায়ের সলোয়ার-কামিজ ছিড়ে যায়। ওই অবস্থায় সালিশে উপস্থিত থাকা শ্যামলী বেগমের ফুফা জয়নাল আবেদীন হাসি, ভাই মন্টু, মিঠুন ও মামাতো ভাই ভুট্টো মিয়া বিবাদে জড়িয়ে পড়লে কোনো মীমাংসা ছাড়াই সালিশ পণ্ড হয়ে যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পরবর্তীতে ভিকটিম বাদী হয়ে (শেরপুর থানায় মামলা নং ৫৯ তাং ২৭/০৭/১৫ ইং ধারা-২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(৪)(খ)/৩০) শেরপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে শেরপুর সদর থানা পুলিশ এক নম্বর আসামি জয়নাল আবেদীন হাসি ও দুই নম্বর আসামি মিন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। ঘটনার পর বিভিন্ন সময় শেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিমসহ তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভিকটিমসহ তার আত্মীয়স্বজন জানিয়েছেন যে, সাপমারী গ্রামে তারা নিরাপদে বসবাস করছেন। সেখানে তাদের নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নাই।