বরিশাল বিমানবন্দরে ঝুঁকি নিয়ে উঠা-নামা করছে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল: প্রয়োজনের তুলনায় কম প্রস্থের রানওয়ের মধ্যেই বরিশাল বিমানবন্দরে বিমান উঠা-নামা করছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে চলছে বিমানবন্দরের কার্যক্রম। রানওয়ের প্রস্থ কম হওয়ায় সম্প্রতি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা যাত্রীবাহী বিমান অবতরণ করতে না পেরে পুনরায় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

passenger taking board at barisal airport
সংকীর্ণ রানওয়ের মধ্যেই চলছে বরিশাল বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উঠা-নামা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বিমানবন্দরে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী রানওয়ে নেই। অথচ আকাশপথে এ রুটে চলাচলকারী ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের বিমান বাংলাদেশ ও ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ঝুঁকি নিয়ে বিমানবন্দরে অবতরণ ও উড্ডয়ন করছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মিটার। প্রস্থ থাকতে হবে কমপক্ষে ৪৫ মিটার। কিন্তু বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলেও প্রস্থ মাত্র ৩০ মিটার। এটা ন্যূনতম মানের চেয়ে ১৫ মিটার কম।

দুর্ঘটনা মোকাবেলায় রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং (আরএফএফ)’র দুটি যান থাকার কথা থাকলেও বরিশাল বিমানবন্দরে এরকম যান রয়েছে একটি। অগ্নিনির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই। রহস্যজনক কারণে এসব নির্দেশনা না মেনেই সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এ বিমানবন্দরে ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল এভিয়েশনের একজন বিশেষজ্ঞ জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ছোট এ বিমানবন্দরের রানওয়েতে ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের অবতরণ ও উড্ডয়ন চরম ঝুঁঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, বরিশাল বিমানবন্দরে রানওয়ের প্রস্থ প্রয়োজনের তুলনায় ১৫ মিটার কম। ফলে ঘন কুয়াশা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এমনকি আকাশে মেঘ বেশি থাকলে এ ধরনের উড়োজাহাজ অবতরণের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পাইলটদের।

অভিযোগ রয়েছে, গত অর্থবছরের বাজেটে বরিশাল বিমানবন্দরসহ সবগুলো বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের একজন প্রভাবশালী সদস্যের একগুঁয়েমির কারণে রানওয়ে সম্প্রসারণ হয়নি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ না করেই বাজেটের ১৯০ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, নিরাপত্তার সবদিক খেয়াল রেখেই এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিমানবন্দরের রানওয়ের পরিসর বৃদ্ধি করা হবে।

বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটি রানওয়ের বাইরে চলে যাবার অন্যতম কারণ ছিল রানওয়ের পর্যাপ্ত প্রস্থ না থাকা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটের পাশাপাশি ঢাকা-রাজশাহীতে তিনটি, ঢাকা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-বরিশালে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রুটগুলোয় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবহরে রয়েছে দুটি ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ।