মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আবদুল ওয়াদুদের পোস্টিং পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে। অথচ তিনি চেম্বার খুলে রোগী দেখছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সিটি হার্ট ক্লিনিকে।
তিনি তার কর্মস্থল থেকে একদিনের ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৬৮ দিনে তিনি আর কর্মস্থলে ফিরে আসেননি। কর্তৃপক্ষ তাকে নোটিশ দিলেও তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। তার বেতন-ভাতা স্থগিত করা হয়েছে।
সরকারি কাজে তার এই প্রকাশ্য অবাধ্যতার কারণে হাসপাতালে প্রসূতিদের চিকিৎসা ও সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হয়ে গেছে। ডা. আবদুল ওয়াদুদের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে মাতৃস্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ জেলা সদরে যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। ফলে তাদের ব্যয় ও ঝুঁকি বেড়ে গেছে। কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বিশেষজ্ঞ সেবা না পেয়ে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাকসুদা বেগম (২৫) নামের এক রোগী মারা গেছেন।
কলাপাড়া হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, গত ২ জুলাই একদিনের ছুটি নেন কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. মো. আবদুল ওয়াদুদ। এরপর আর তিনি কর্মস্থলে ফিরে আসেননি। গত ২৬ জুলাই কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. লোকমান হাকিম ও ১৭ আগস্ট পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. এ এম মজিবুল হক পৃথক চিঠিতে ডা. মো. আবদুল ওয়াদুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিলেও তিনি যোগদান করেননি।
জানা যায়, ডা.মো. আবদুল ওয়াদুদ বর্তমানে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সিটি হার্ট ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী দেখছেন। এ কারণে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, গাইনি ডাক্তার না থাকায় মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম ও ডিএসএফ’র কার্ডধারী রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কলাপাড়া হাসপাতালে ফ্রি-অপারেশন চালু থাকলেও সিজারিয়ান ডাক্তার ও অবশ করার ডাক্তার না থাকায় বর্তমানে অপারেশন রুমে তালা ঝুলছে।
হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের বাড়িতে ধাত্রীর সহায়তা নিয়ে সন্তান প্রসব করেন মাকসুদা বেগম। নবজাত শিশুটির নাম রাখেন আবদুল্লাহ। কিন্তু প্রসবের পরই রক্তশূন্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে থাকেন। ১২ দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু গাইনি ডাক্তার না থাকায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে তিনি মারা যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিমাসে অন্তত ৬/৭ শ’ গর্ভবর্তী মা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এখন ডাক্তার না থাকায় যে মায়েদের জরুরি অপারেশনের প্রয়োজনে তাদের পটুয়াখালী ও বরিশাল হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে। গত দুই মাসে অন্তত তিন শতাধিক গর্ভবতী মাকে জরুরি অপারেশনের জন্য রেফার করা হয়েছে। এ কারণে রোগীদের গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
একটি সূত্র জানায়, ডা. আবদুল ওয়াদুদ কলাপাড়ার এক ক্লিনিক মালিকের সাথে সখ্যতা করে লালমোহনে চলে গেছেন। এর কারণ বর্তমানে ওই ক্লিনিকে প্রতি শুক্রবার এক সিজারিয়ান ডাক্তার ঝালকাঠি থেকে এসে এখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. লোকমান হাকিম জানান, একদিনের ছুটি নিয়ে ডা. আবদুল ওয়াদুদ কলাপাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ায় হাসপাতালে অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে রোগীরা দূর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ডা. মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, তিনি বর্তমানে চরফ্যাশনের সিটিহার্ট ক্লিনিকে আছেন। ছুটি নিয়ে ৬৮ দিন হাসপাতালে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন আগামী শনিবার হাসপাতালে যোগদান করবেন।