পাকশী রেলওয়ের এক বছরে রেকর্ড আয়, যাত্রী সেবার মান তথৈবচ

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে আড়াই শ’ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। আগের বছরের তুলনায় এ আয় ৬১ কোটি টাকা বেশি। এটাই এখন পর্যন্ত রেলওয়ের এ বিভাগের এক বছরের সর্বোচ্চ আয়।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, রেলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দেয়ায় এরকম আয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে রেলওয়ের আয় বাড়লেও যাত্রী সেবার মান একটুও বাড়েনি বলে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যাত্রী বহন খাতে ১৩৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, পার্সেল বহন খাতে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, মালামাল বহনে ৪৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা ও বিবিধ খাতে ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা মিলে মোট ১৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা  আয় হয়।

pakshi railway's record income
পাকশী সেতু অতিক্রম করছে যাত্রীবাহী ট্রেন।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয় ছিল যাত্রী বহন খাতে ১৪৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, পার্সেল বহনে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ,মালামাল বহন খাতে ৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা ও বিবিধ খাতে ৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২৫২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আয় হয়। এ আয় আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৬১ কোটি টাকা বেশি।

পাকশী বিভাগের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আফজাল হোসেন জানান, স্টেশন বন্ধ থাকা, ঢাকামুখী ট্রেনে চাহিদা অনুযায়ী কোচ সংযোজন করতে না পারা, চালক (এলএম) ও গার্ড সংকট থাকার পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক দায়িত্ব পালনের কারণে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ করে আয় করা সম্ভব হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্টেশন চালু করতে পারলে, ঢাকাসহ দূরপাল্লার ট্রেনে আরো কোচ সংযোজন করা গেলে এবং চালক (এলএম) ও গার্ড সংকট না থাকলে তাহলে আরও বেশি আয় হতো বলে তিনি জানান।

এদিকে রেলওয়ের আয় বাড়লেও যাত্রী সেবার মান আরো নিচে নেমে গেছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে। ট্রেনে চলাচলরত যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানাা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন এখন ট্রেনকে নিরাপদ মনে করে। ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীর সংখ্যাও এখন অনেক কম। চাহিদা থাকা সত্বেও সব ক’টি ট্রেনে কোচের সংখ্যা সীমিত। যাত্রীরা সিট না পেলেও দাঁড়িয়েই চলাচল করছে। তবে রেলওয়ের স্টাফ পরিচয়ে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কারণে টিকিটের যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন। স্টাফদের জন্য পাস-এর ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই পাস গ্রহণ না করে ট্রেনকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করেন বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।

যাত্রীদের আরো অভিযোগ, ট্রেনের টয়লেটগুলোর বেহাল অবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের সংখ্যাও অতি নগণ্য। দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর স্টপেজ স্টেশনের সংখ্যা বেশি থাকায় চার ঘন্টার পথে সময় লাগে ছয় ঘন্টা।

এ ব্যাপারে রেল সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশিরভাগ ট্রেনই বিলম্বে চলাচল করায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার মধ্যে চলাচল করছেন। রেল কর্তৃপক্ষ লোকবলের অভাবে স্টেশন বন্ধ থাকাকে প্রধান কারণ বললেও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও এজন্য দায়ী বলে জানা গেছে। ক্রসিং দেয়ার ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ভাবে স্টশন নির্ধারণ ও সময় সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে অনেক ট্রেনকে স্টেশনে থামিয়ে রেখে বিলম্বের মাত্রা বাড়ানো হয়। এত যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করে নতুন লোক নিয়োগদান করা হলে রেলের আয় আরো বাড়বে। কোচ সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত জনবল নিয়োগ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও যাত্রী সেবার মানের দিকে নজর দিলে ট্রেনের আয় আরো বাড়বে।