কাজী শাহেদ, রাজশাহী: সবার মৌলিক অধিকার রক্ষায় পুলিশ বাহিনীকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, আইনশৃঙ্খলার মত জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেবার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশের সব সদস্যকে ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। জনগণের পরম বন্ধুর পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ তার চরম বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই আইনি সেবা দিয়ে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনমানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা পুলিশ ফোর্সকে সার্ভিসে রূপান্তরের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।’
৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম পর্যায়ে ৩২ হাজার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের অর্থায়নে ২৭টি নতুন ব্যারাক, ৬২টি ফাঁড়ি, ৭৩টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ৩৮টি মহিলা ব্যারাক, আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ, ১৭১টি নতুন থানা ভবন নির্মাণ, ৪৫ জেলায় পুলিশ সুপারদের অফিস ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে সিআইডির ৪৫টি নতুন অফিস স্থাপন, ৫০টি হাইওয়ে আউট পোস্ট, ১২টি র্যাব কমপ্লেক্স, ১টি র্যাব ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স, পুলিশ রিফর্ম প্রোগ্রাম (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২১টি থানাকে মডেল থানায় রূপান্তর এবং ৬টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নির্মাণসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় স্থাপনা নির্মাণের কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া সাইবার ক্রাইম তদন্তে দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি যুগোপযোগী আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী ও জনবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী পুলিশ পরিদর্শক পদকে দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদ থেকে প্রথম শ্রেণীর (নন-ক্যাডার) গেজেটেড পদে এবং উপ-পরিদর্শক ও সার্জেন্ট পদকে তৃতীয় শ্রেণীর পদ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদে উন্নীত করেছি। আমাদের সময়েই সর্বমোট ১২ হাজার ৯৩৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। রেশন ৬০ ভাগ থেকে শতভাগে উন্নীত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়নের এই যুগে অপরাধ তদন্তে যুগোপযুগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অপরাধ দমন ও উদঘাটন সম্ভব নয়। তাই সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সেই লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। অপরাধ ও অপরাধী সনাক্তকরণে পুলিশের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণে আমরা বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে আধুনিক ও যথাযথ মানসম্পন্ন করার জন্য জনবল বৃদ্ধিসহ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করে চলেছি।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। এদেশে সংবিধানকে সমুন্নত করার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। আমরা জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমনের মাধ্যমে এ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিনাশের সব অপচেষ্টা প্রতিহত করতে শতভাগ সমর্থ হয়েছি। পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে চরমপন্থিদের আইনের আওতায় আনতে পেরেছি। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দমনেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা ছিল জনগণের কাছে আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার। ইতোমধ্যে কিছু রায় কার্যকর হতে শুরু হয়েছে। একে একে সব যুদ্ধপরাধীর বিচার এদেশের মাটিতে সম্পন্ন করা হবে।’
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ নাঈম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকসহ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে ২৬ জন নারীসহ মোট ১৬১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে অশ্বারহণে এএসপি ফারুক হোসেন এবং সব বিষয়ে রেজওয়ানা চৌধুরী এবং পঙ্কজ বড়ুয়াকে পুরস্কৃত করা হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। প্রথমেই তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে নবনির্মিত অতিথি ভবন ‘তরুণিমা’ এবং প্যারেড গ্রাউন্ডের নবনির্মিত গ্যালারির উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন।
পরে প্রধান অতিথির ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর তীরে নবনির্মিত অতিথি ভবন ‘ঊর্মি’ উদ্বোধন করেন। তিনি শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ছবি আলোকচিত্র গ্রহণেও অংশ নেন।