ভারতে রপ্তানি বন্ধ, বিশাল বিপর্যয়ের মুখে সোনালি আঁশ

প্রতিনিধি, খুলনা: বাংলাদেশ থেকে পাট  ও পাটজাত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার।  বৃহস্পতিবার জারি করা ভারত সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের কারণে ওই দিন বিকেল ৩টা থেকে বেনাপোলসহ সকল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের পাট রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে  বাংলাদেশের কাঁচা পাটের বাজারে ধস নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের পাট রপ্তানিকারকরা। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে বেকার হয়ে পড়বে লক্ষাধিক শ্রমিক, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বহু কৃষক।

ভারত সরকারের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের জুট কমিশন সে দেশের পাট সংক্রান্ত কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রক। জুট কমিশনের প্রধান কার্যালয় কোলকাতার সল্ট লেকে। ১০ সেপ্টেম্বর এই কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে ভারতের পাট আমদানিকারকদের জন্য কঠিন শর্তারোপ করেছে। প্রজ্ঞাপনের কপি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে বেনাপোল বন্দর  বা হরিদাসপুরে ভারতীয় কাস্টম পেরিয়ে সে দেশে পাটের ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে খুলনার পাট রপ্তানিকারকদের শতাধিক পাট বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে গেছে।

খুলনার অন্যতম পাট রপ্তানিকারক ঢাকা ট্রেডিং লি. এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আলহাজ টিপু সুলতান পাট রপ্তানি বন্ধের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভারতের পাট কমিশনের প্রজ্ঞাপনের পর বিকাল ৩টা থেকে পাট বোঝাই কোনো ট্রাক ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি দাবি করেন, খুলনার পাট রপ্তানিকারকদের একশ ট্রাক আটকা পড়ে গেছে। অনেক রপ্তানিকারক ট্রাক ড্যামারেজের ভয়ে পাট বোঝাই ট্রাক ফেরত নিয়ে এসেছে।

ভারতের জুট কমিশননের প্রজ্ঞাপনের সাথে ভারতীয় আমদানিকারকদের নতুনভাবে ফরম্যাট করা ফরম দেয়া হয়েছে। সেটি পূরণ করে নতুনভাবে  নিবন্ধ নিতে বলা হয়েছে। এসব আমদানিকারকদেরই আগে থেকেই আমদানি-রপ্তানি  লাইসেন্স রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে,  প্রতি চালান আমদানির পূর্বে কমিশন থেকে চালান হিসাবে এনওসি নিতে হবে। আলহাজ্ টিপু সুলতান জানান, ২০ হাজার বেল এলসির পাট  ২/৩ শত ট্রাকে চালান করে ভারতে রপ্তানি হয়। এখন  প্রতি চালানে এনওসি আনতে গেলে এলসির সময়সীমা পার হয়ে যাবে।
একইভাবে বলা হয়েছে ভারতে আমদানি করা পাট দিয়ে বস্তা  তৈরি করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া পাট দিয়ে সে দেশের জুটমিলগুলোর বেশির ভাগই বস্তা তৈরি করে।

প্রবীণ পাট রপ্তানিকারক হারুন অর রশিদ জানান, ভারতের প্লাস্টিকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রভাব বিস্তার করে এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করাতে পারে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন, ভারতে পাট আমদানিকারকদের সাথে কথা বললে তারা মন্তব্য  করেছেন ভারত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত ফলে বাংলাদেশের পাট বাজার অচল হয়ে পড়বে। অপরদিকে ভারতের কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। এই সুযোগে চোরাই পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট পাচার হয়ে যেতে পারে।

তিনি জানান, প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ভারতে আমদানি করা পাট সে দেশে নেই এমন নিশ্চয়তা দেবার পরই ভারতে আমদানি করা যাবে। একই ভাবে ভারতের জুট মিল ছাড়া কোনো আমদানিকারক পাট মজুদ করতে পারবে না।

সূত্রগুলো বলছে,  বাংলাদেশ হতে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ লাখ বেল পাট রপ্তানি হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে চিন,পাকিস্তান, ইউরোপ পাট আমদানি না করায় তা নেমে আসে ৮/৯ লাখ বেলে।  যার ৮০-৯০ ভাগই ভারতে রপ্তানি হয়। ভারতের জুট মিলগুলো আমদানি করা চটের বস্তা  তৈরি করে থাকে।

পাট রপ্তানি খাতে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো খুলনায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। পাট রপ্তানিতে ধস নামলে সে খাতেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।

পাট রপ্তানির সাথে এদেশের কৃষক ছাড়াও কয়েক লাখ শ্রমিক জড়িত। চলতি বছর পাট মৌসুম শুরু হবার পর থেকে কাঁচা পাটের বাজার চাঙ্গা ছিল। বৃহস্পতিবার  ভারত পাট গ্রহণ করছে না শুনে শুক্রবার খুলনার দৌলতপুর মোকামে পাট কেনা-বেচা বন্ধ হয়ে গেছে।

পাট ব্যবসায়ীদের অভিমত, এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।