এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল: দোকান থেকে টাকা চুরির অপবাদে সালিশদাররা ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রকে অমানুষিক নির্যাতনের পর নাকে খত দিয়ে থুথু চাটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতিত শিশুর বাবার কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ সালিশদার সাবেক এক ইউপি সদস্যসহ চারজনকে আটক করে। শুক্রবার রাতে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সালিশে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, শুক্রবার দুপুরে ওই স্ট্যান্ডের চা বিক্রেতা দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের নুরুল হক সরদারের পুত্র হাবুল সরদারের দোকান থেকে তার অনুপস্থিতিতে সাড়ে তিন হাজার টাকা চুরি হয়। দোকানের সামনে ওইসময় চার-পাঁচজন শিশু খেলা করছিলো। পরবর্তীতে টাকা চুরির ঘটনায় দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের গৌরাঙ্গ লাল দাসের পুত্র ও গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দেবাশীষ দাসকে অভিযুক্ত করা হয়। টাকা চুরির অভিযোগে রাতে দেবাশীষকে বাড়ি থেকে হাবুলের লোকজনে ধরে আনে। এসময় তার পকেটে থাকা ১৬৬ টাকা দেখে তা রেখে দিয়ে চুরির অভিযোগে সালিশের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র আরো জানিয়েছে, ওইদিন রাতেই হাবুলের চায়ের দোকানের সামনে সালিশ বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্য দলের সভাপতি সবুজ বেপারী, সাবেক সেনা সদস্য মোক্তার বেপারী, স্থানীয় মাতুব্বর মালেক সিকদার, চৌকিদার আবুল হোসেনসহ স্থানীয় উৎসুক শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শিশুর অভিভাবকদের উপস্থিতিতে দেবাশীষকে চোর সাব্যস্ত করে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে রাস্তার ওপর থুথু ফেলে তা শিশুটিকে মুখ দিয়ে চাটতে বাধ্য করা হয়। এরপর শিশুটিকে নাকে খত দেয়ানো হয়। এছাড়াও দেবাশীষের বাবার কাছ থেকে তাৎক্ষণিক দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, কথিত সালিশ বৈঠকে শিশু নির্যাতনের খবর পেয়ে রাতেই অভিযান চালিয়ে সালিশদার মোকতার বেপারী, সবুজ বেপারী, মালেক শিকদার ও চা বিক্রেতা হাবুল সরদারকে আটক করা হয়। থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতরা জরিমানার টাকা ফেরত দিয়েছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় মামলা দায়ের করতে রাজি না হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে শনিবার দুপুরে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সালিশদাররা ওই এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে তাদের হাতে জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন স্থানীয় সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন। ফলে শিশু নির্যাতনের ঘটনায়ও তারা মামলা দায়ের করতে সাহস পাননি। স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে সালিশদার সবুজ বেপারী, মোক্তার বেপারী ও মালেক সিকদার বলেন, বৈঠকে জরিমানার টাকা আদায় করা হয়েছিলো। নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।