বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে কমলনগরে ফসল বিপর্যয়, ক্ষতি ৬ কোটি টাকা

বেলাল হোসেন জুয়েল, লক্ষ্মীপুর: টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় প্রায় ছয় কোটি টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সহস্রাধিক কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে পাকা আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি। এ তথ্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি হবে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমন আবাদ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অন্যদিকে, ঋণগ্রস্তরা মহাজনের টাকা পরিশোধ নিয়েও গভীর হতাশার মধ্যে পড়েছেন।

সরেজমিন উপজেলার চরকাদিরা, বটতলী, চরপাগলা, তোরাবগঞ্জ, চরমার্টিন, চরলরেন্স, চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরফলকন ও পাটারীরহাট এলাকা ঘুরে জানা যায়, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে জুলাই মাস হতে ওইসব এলাকায় ভারি বর্ষণ চলতে থাকে। একই সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার জোয়ারের পানি বেড়ে চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চ প্লাবিত হয়। ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

কৃষকদের তথ্যানুযায়ী, বৃষ্টির পানি জমে থাকায় আমন বীজতলার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ, কাটার  আউশ ধানের ১০ শতাংশ এবং গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। তারা চলতি মৌসুমের আমন আবাদ এবং মহাজনের ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

চরকাদিরা বটতলী এলাকার কৃষক জমশেদ আলম জানান, প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি ১৫ শতক জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করেছেন। টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চারা না থাকায় দুই একর জমির আমন আবাদ কীভাবে করবেন-এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান।

চরফলকন এলাকার সবজিচাষি ইকবাল হোসেন জানান, বৃষ্টির পানিতে ক্ষেত ডুবে থাকায় তার ২০ শতক জমির গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

চরপাগলা এলাকার কৃষক হোসেন আহাম্মদ জানান, পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় তার প্রায় আড়াই একর জমির আউশ ধান পুরোটাই নষ্ট হওয়ার উপক্রম  হয়েছে।

চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশ্রাফ উদ্দিন রাজু জানান, তার ইউনিয়নের চরবসু এলাকার দলির খাল এবং বটতলী এলাকার জান্ডার খাল দুটি দীর্ঘদিন ধরে পুনর্খনন না করায় বৃষ্টির পানি নেমে যেতে পারে না। টানা ও ভারি বর্ষণে পুরো ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কোটি টাকার কৃষি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়। টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে এর মধ্যে ২৬ হেক্টর বীজতলা সম্পূর্ণ এবং ২৯ হেক্টর বীজতলা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৫৭০ জন কৃষক ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হন।

সূত্র আরও জানান, এ মৌসুমে উপজেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি আবাদ করা হয়েছে। পানিতে ১২ হেক্টর জমির সম্পূর্ণ এবং ১৮ হেক্টর জমির আংশিক শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির শিকার হন ২৬০ জন কৃষক। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৮৪ লাখ টাকা।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ছালেহ উদ্দিন পলাশ জানান, ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় ফসলের এত বেশি ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তিনি দাবি করেন, এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরবর্তী প্রযুক্তিগত করণীয় সম্পর্কে এবং চলতি মৌসুমে আমন আবাদ নির্বিঘ্ন করতে সহজে নতুন বীজতলা তৈরি করার ব্যাপারে তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.