ব্যাংক ঋণ নিতে জালিয়াতি, রাজশাহীতে নারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

কাজী শাহেদ, রাজশাহী: একই নারী একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রাজশাহীর বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলে ৪০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করেছেন। আফরোজা সুলতানা লুনা নামের ওই নারী ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোথাও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, কোথাও বুটিক ফ্যাশন খুলে বসেছেন। একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, আফরোজা সুলতানা লুনা এক সঙ্গে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে নগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটে মেসার্স সাদিয়া বুটিক ফ্যাসান অ্যান্ড গার্মেন্টস ও জামাল সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় টপদ্যাট-চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। লুনা ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ঋণ উত্তোলন করেছেন। লুনার বাড়ি ঈশ্বরদীতে হলেও বর্তমানে নগরীর দরগাপাড়ায় থাকেন। তার স্বামীর নাম কামরুজ্জামান খোকন।

জানা যায়, সাদিয়া বুটিকের নামে নগরীর বিডিবিএল নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চার লাখ টাকা, টপদ্যাট চাইনিজ রেস্টুরেন্টের নামে একই প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকা, সাদিয়া বুটিকের নামে ওয়ান ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা, এবি ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রাইম ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা, পুবালী ব্যাংক (নিউমার্কেট শাখা) থেকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স থেকে ছয় লাখ টাকা, ইউনাইটেড লিজিং থেকে চার লাখ টাকা, টপদ্যাটের নামে সিটি ব্যাংক থেকে চার লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি একজন হলেও ব্যাংকগুলোতে প্রয়োজনীয় কাগজের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও মায়ের নাম একাধিক ব্যবহার করা হয়েছে।

সম্প্রতি উত্তরা ব্যাংক (সাহেব বাজার শাখা) থেকে ১০ লাখ টাকার আরো একটি ঋণ বরাদ্দ হওয়ার সময় তার দাখিল করা কাগজপত্রে জালিয়াতি ধরা পড়ে। ফলে বের হয়ে আসে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ঋণ নেওয়ার তথ্য। ওয়ান, সিটি ও প্রাইম ব্যাংকে তার দেওয়া পরিচয়পত্রের নম্বর হচ্ছে ৮১৯২২০৯৪২২৫০৪, উত্তরা ব্যাংকে দাখিল করা পরিচয়পত্রের নম্বর হচ্ছে ৮১৯২২০৯১০৪৫৪৩ এবং এবি ব্যাংকে দাখিল করা পরিচয়পত্রের নম্বর ৮১৯২২০৯৩৬৩০৫৯।

অভিযোগকারী হাবিবুর রহমান জানান, ব্যবসার নামে প্রতারণা করে নগরীর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন লুনা। এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওয়ান ব্যাংক রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক এমএ মান্নান জানান, বিষয়টির তদন্ত চলছে। লুনা যেসব কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নিয়েছেন সেইসব কাগজপত্রের মধ্যে অসামঞ্জস্য আছে। এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আজিজুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে এখন কিছু বলা যাবে না। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি তদন্ত করছেন ও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে এ বিষয়ে লুনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টপদ্যাটে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.