ফলোআপ
প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ধারালো অস্ত্রসহ তিন জলদস্যুকে আটকের ঘটনাটি সমঝোতা না করায় উল্টো অভিযোগকারীকেই কারাগারে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার দুপুরে থানায় অভিযোগ করতে গেলে মালেক মাঝি নামে ওই জেলেকে পুলিশ আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ (২০ সেপ্টেম্বর) আদালতে সোপর্দ করে। পরে বিচারকের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, নদীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধের জের ধরে ডাকাত আটকের ঘটনা সাজানোর কারণে ওই জেলের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় আবদুল হাসিম মাঝিসহ এলাকাবাসী জানান, শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে উপজেলার দক্ষিণ চরফলকন এলাকার মেঘনা নদীতে মালেক মাঝির ট্রলারে সাত থেকে আটজন জলদস্যু ডাকাতির চেষ্টা করে। এ সময় জেলেদের চিৎকারে অপর মাছ শিকারি জেলেরা ধাওয়া করে কয়েকটি রামদাসহ আবুল কালাম, শেখ ফরিদ ও মনির হোসেন নামে তিন জলদস্যুকে আটক করে পুলিশে দেয়।
হাসিম মাঝি অভিযোগ করেন, এর পর পাটারীরহাট ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক এমরান হোসেন মঞ্জুর ও চরফলকন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোছলেহ উদ্দিন আটকদের পক্ষ নিয়ে সমঝোতার জন্য বসতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে কমলনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে মালেক মাঝিকে ওসি কবির আহম্মদ সমঝোতায় বসতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় মালেক মাঝিকে আটক করে ওই তিন জলদস্যুর সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করেন।
স্থানীয় পাটারীরহাট ইউপি চেয়ারম্যান একেএম রাশেদ বিল্লাহ আলমগীর জানান, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আটক তিন জনের মধ্যে আবুল কালাম চিহ্নিত ডাকাত। তিনি অভিযোগ করেন, যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ওই ডাকাতদের পক্ষ নিয়ে ঘটনাটি সমঝোতার মাধ্যমে তাদেরকে (ডাকাতদের) ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে উল্টো অভিযোগকারী নিরপরাধ ওই জেলেকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা এমরান হোসেন মঞ্জুর দাবি করেন, দু’পক্ষের বিরোধের জের ধরে ওই তিন ব্যক্তিকে স্থানীয়রা আটক করে। ঘাটে তার মাছের আড়ত থাকায় বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য তিনি থানায় গিয়েছেন।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির আহাম্মদ বলেন, ‘মেঘনা নদীতে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধের জের ধরে একটি পক্ষ তিনজনকে আটক করে ডাকাত সাজিয়ে পুলিশে দেয়ায় অভিযোগকারীসহ ওই চারজনকেই ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।’
অপরদিকে, স্থানীয় জেলেসহ এলাকাবাসী জানান, ডাকাতি চেষ্টার ঘটনাটি জেলেরদের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা বলে যে নাটক সাজানো হয়েছে সেটি অপর একটি ঘটনা। আর সেটি শুক্রবার রাতে উপজেলার লুধুয়া মাছঘাট এলাকায় অপর দু’টি ট্রলারের জেলেদের মধ্যে ঘটে। ওই ঘটনার সঙ্গে ডাকাত আটকের ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে তারা দাবি করেন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘অস্ত্রসহ ডাকাত আটক করেও যদি অপরাধীদের অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাবে উল্টো মালিককে জেল খাটতে হয় তাহলে তো আর কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না।’
