ঝড়ো বাতাসে বঙ্গোপসাগরে ৭ ট্রলারডুবি, ১৩ জেলে নিখোঁজ

প্রতিনিধি, বাগেরহাট ও কলাপাড়া (পটুয়াখালী): কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের প্রায় দেড়শ কিলোমিটার পশ্চিমে আজ (রোববার) সকালে ৩০ জেলে নিয়ে দুটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। অন্যদিকে ঝড়ো বাতাসে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে আরো পাঁচটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ট্রলারডুবিতে বাগেরহাট ও বরগুনার কমপক্ষে ১৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫ জেলেকে।

শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত সুন্দবনের দুবলার চর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ফেয়ারওয়ে বয়া, হিরণ পয়েন্ট ও কুয়াকাটা এলাকায় এসব ট্রলার ডুবে যায়।

কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, সাগর উত্তাল থাকায় আলীপুরের ইসমাইল কন্ট্রাকটরের এফবি ইমরান ট্রলার ১৮ জেলে নিয়ে ও কক্সবাজারের সরোয়ার কামাল রনির এফবি হাসিনা-সামিয়া-১ ট্রলারটি ১২ জেলে নিয়ে ডুবে যায়। এদের মধ্যে ইমরান ট্রলারের ১৮ জেলে উদ্ধার হলেও এফবি হাসিনা-সামিয়া-১ ট্রলারের সাত জেলে নিখোঁজ রয়েছে ।

তিনি আরো জানান আলীপুরের আলীপুরের রতন কোম্পানি, হাবিব কোম্পানি ও ছোবাহান কোম্পানির তিনটি ট্রলার রোববার বিকাল পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। এই ট্রলারে অন্তত ৩৬ জন জেলে রয়েছে। কিন্তু জেলেদের সাথে তারা যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ট্রলার মালিক ও জেলেদের স্বজনরা। এই ট্রলার তিনটির জেলেদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় মাছ ধরার শত শত ট্রলার সুন্দরবনের কচিখালী, সুপতি, কটকা, নারকেলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে বলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন। ট্রলারডুবির ঘটনায় খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলো হচ্ছে, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. কামাল হাওলাদারের এফবি আরিফ, দীপচর গ্রামের আ. মান্নানের এফবি মান্নান, পাথরঘাটা উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী শিপন দাসের এফবি সোনাই, সোহারাব হোসেনের এফবি মায়ের দোয়া, সোহাগ হোসেনের এফবি সোহাগ। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে তিন জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন শরণখোলার এমাদুল হাওলাদার এবং পাথরঘাটার কালাম ও পিরোজপুরের চরখালী গ্রামের এমাদুল হক।

শরণখোলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবর তালুকদার দুপুর ২টার দিকে জেলেদের বরাত দিয়ে জানান, শনিবার রাত ৪টার দিকে সাগরে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। ওই ঝড়ে উপজেলার রাজৈর এলাকার এফবি আরিফ ও দীপচরের এফবি মান্নান ট্রলার ডুবে যায়। এঘটনায় আরিফ ট্রলারের তিন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি আরো জানান, ডুবে যাওয়া এফবি আরিফ ট্রলারের বাকি ১৩ জেলেকে অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে পাথরঘাটা পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়া, উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের হাতেম মোল্লার এফবি রহিমা ট্রলারের জেলেরা সাগর থেকে ভাসমান আরো ২০ জেলেকে উদ্ধার করে হিরণ পয়েন্টে পৌঁছে দিয়েছে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী মোবাইল ফোনে জানান, শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ঝড়ের কবলে পরে কমপক্ষে সাতটি মাছ ধরা ট্রলার বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। এতে অন্তত ১৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে, ট্রলার ডুবি ও নিখোঁজের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ ট্রলারডুবির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কটি ট্রলার ডুবেছে এবং কতো জেলে নিখোঁজ হয়েছেন তার সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। বনবিভাগের কর্মীরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। দুর্যোগের কবলে পড়ে শত শত ট্রলার সুন্দরবনের কচিখালী, সুপতি, কটকা, নারকেলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে। এসব ট্রলার ও জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তায় বনবিভাগ নিয়োজিত রয়েছে।

মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী মাসুদ জানিয়েছেন, তারা সাগরে ট্রলারডুবি ও জেলে নিখোঁজের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এব্যাপারে নৌবাহিনীর সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.