রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): ধান, পান, সুপারির জন্য খ্যাত কাউখালী উপজেলা সুপারিতে উৎপাদন ও বাণিজ্যের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ধান ও পান উৎপাদনে এই উপজেলা শক্তিশালী অবস্থান হারিয়ে ফেললেও লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেব জায়গা ধরে রেখেছে সুপারি। উপজেলায় সুপারির চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এবার সুপারির ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারদরও ঊর্ধ্বমুখী। সুপারি বিক্রি করে এবার ভালো লাভ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এখানকার চাষিরা।
সুপারি বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মিটছে অনেক কৃষকের। সুপারির চাষ লাাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য, উপজেলায় বছরে কয়েক কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারি কেনা-বেচা হয়। কৃষক ও সুপারি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশে সুপারির অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের কাউখালী সুপরিচিত। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত সুপারির এক বড় অংশ কাউখালীতে উৎপাদিত হয়।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চাষিদের পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বেড়েছে ফলন।
ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া জানান, শুকনো সুপারি সাধারণত ফাল্গুন মাস থেকে বিক্রি শুরু হয়ে আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে। শ্রাবণ মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে কাঁচা সুপারি বিক্রি। এ সময়ে কৃষকদের হাতে নগদ টাকার ঘাটতি থাকে। তাছাড়া এ সময় কৃষকরা বোরো, গমসহ রবিশস্য চাষে ব্যস্ত থাকে। গাছের সুপারি বিক্রি করে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে কৃষি কাজে লাগাতে পারে এ টাকা।
কাউখালী শহরে বিরাট সুপারির হাট গড়ে উঠেছে। এ হাট সোমবার ও শুক্রবার বসে। কাউখালী ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের ১২টি উপজেলার ব্যবসায়ীরা এখানে সুপারি বেচাকেনা করেন। এছাড়া গাজিরহুলা, চৌরাস্তা, তালুকদারহাট, মিয়ারহাট, ধাবড়ী, নতুনবাজার, কেউন্দিয়াসহ ডজনখানেক ছোট-বড় হাটে সুপারি কেনা-বেচা হয়। এসব হাটে সারাবছরই সুপারি কেনা-বেচা চলে। তবে ফাল্গুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত শুকনো এবং শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত কাঁচা সুপারির সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পার সাতুরিয়ার মাহাবুব জানান, আমার মতো অনেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি থেকে সুপারি কিনে এনে এসব হাটে বিক্রি করি। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে উপজেলায় কোটি কোটি টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়।
কাউখালীর সুপারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, কাউখালীর প্রতি হাটবারে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনা-বেচা হয়। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে থাকি। শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে এবং ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ২১ ঘার (২১০টি) এক কুড়ির কাঁচা সুপারির মূল্য শ্রেণীভেদে ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা। তাছাড়া শুকনো সুপারি প্রতিমণ (৪০ কেজি) ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার পাচটি ইউনিয়নে প্রায় ৩৭০ একর জমিতে সুপারির আবাদ হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপারির উৎপাদন ও বিক্রি চলবে।