মা-ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় ১৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ

বেলাল হোসেন জুয়েল, লক্ষ্মীপুর (দক্ষিণ): ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিন মেঘনা নদী ও এর অববাহিকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে মা-ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

মাছ ধরা নিষিদ্ধের পাশাপাশি এ সময় ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ এবং পরিবহনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলাসহ দেশের উপকূলীয় কয়েকটি উপজেলার নদী অঞ্চলের প্রধান প্রজনন পয়েন্টগুলোতে ১৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় ও মজুদও নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারি এ আইন বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম হামিদ শাহিন জানান, আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমায় মা-ইলিশ সব চেয়ে বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়ে। এ সময়টাকে ইলিশের ভরা প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় মা-ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মেঘনা উপকূলে চলে আসে।  এ কারণে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মেঘনায় সব ধরনের মাছধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মৎস্য কর্মকর্তা আরো জানান, নিষেধাজ্ঞার এ সময় আগে ১১দিন ছিল। এ বছর চারদিন বাড়ানো হয়েছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী চন্দ্রমাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে প্রতিবছর আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে ও পরের পাঁচদিন করে মোট ১১দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকত। কিন্তু দেখা যেত নিষিদ্ধ সময় ১১ দিন পর মা-ইলিশ সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময় জেলেদের জালে ধরা পড়ত। এজন্য এ সময় চারদিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ বছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার দিন ও এর আগে তিনদিন ছাড়াও পূর্ণিমার পর ১১ দিনসহ ১৫ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।

কেউ এ আদেশ অমান্য করলে তার কমপক্ষে একবছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ড হতে পারে।

মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ক কমলনগর উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উপজেলার মতিরহাট থেকে রামগতির চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত তদসংলগ্ন মেঘনা নদী, মাছ বাজার ও আড়তগুলোতে ২৪ ঘণ্টা অভিযান অব্যাহত থাকবে। এজন্য উপজেলা মৎস্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.