বাড়তি ভাড়া গুনছে যাত্রীরা, সপ্তাহ জুড়ে থাকবে ভিড়

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল: ঈদ শেষে কর্মস্থলগামী মানুষকে সেই একই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। লঞ্চ কিংবা বাসে নেই তিল ধরনের ঠাঁই। তারমধ্যে টিকেট যেন সোনার হরিণ। সব মিলিয়ে দখিনের ঘড়ে ফেরা মানুষ আসতে যে যন্ত্রণা ভোগ করেছে, ফেরার পথেও সেই একই যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। তার ওপর বাস যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

Barisal=01
বাস যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া

এবার সরকারি বন্ধের দিন ঈদ হওয়ায় মাত্র এক দিন অতিরিক্ত ছুটি উপভোগ করেই গন্তব্যে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপরও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পেরে খুশি তারা। ঈদের তিন দিনের ছুটির সঙ্গে যারা বাড়তি ছুটি নিতে পারেননি তারা রোববারই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেও বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ, লঞ্চ টার্মিনালে কর্মমুখী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সপ্তাহজুড়ে যাত্রীদের ভিড় থাকবে বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক আবুল বাশার মজুমদার জানান, শনিবার থেকেই মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে কমপক্ষে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। সপ্তাহজুড়ে লঞ্চ ও স্টিমারের স্পেশাল সার্ভিস অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকার বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী তিন দিন কোরবানি হওয়ায় এখন পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ পুরোটা পড়েনি। সড়কপথে এ চাপ সামনের চার দিন বলতে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত থাকবে। এমনটা জানালেন হানিফ পরিবহনের বরিশালের কাউন্টার ম্যানেজার মো. রানা তালুকদার। তবে ঈদের সুযোগে যাত্রীদের জিম্মি করে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কোনো কোনো পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে জানা গেছে, এখান থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ঢাকা ও উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন শ’ গাড়ি যাতায়াত করে। কোরবানির ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়ায় সাড়ে তিন শ’ থেকে চার শ’ গাড়ি ছেড়ে যায় এই টার্মিনাল থেকে।

সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. আনিচুর রহমান বলেন, এবার ঢাকা থেকে আরিচা পর্যন্ত প্রচুর জ্যাম থাকায় ঈদে বিশেষ করে পরিবার নিয়ে অনেক কম যাত্রী এসেছেন। তাদের সাতটি এসি ও নন-এসি মিলিয়ে ৮০টি বাস বরিশাল অঞ্চলে চলাচল করছে। এ বছর যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় বাড়তি বাস তাদের দিতে হয়নি। অনেক যাত্রীই বাড়িতে আসার সময় ফেরার টিকিট আগাম কিনে নিয়েছেন। এ জন্য এখন সিট থাকলেও পেছনের দিকের সিট পাওয়া যাচ্ছে। ভাড়ার ক্ষেত্রে জানালেন তারা সরকার নির্ধারিত নন-এসি বাসে জনপ্রতি ৫২০ ও এসি বাসের ভাড়া এক হাজার টাকা নিচ্ছেন। তবে স্বাভাবিক সময় নন-এসি বরিশাল-ঢাকা ভাড়া নেওয়া হয় সাড়ে চার শ’ ও এসি বাসে নেওয়া হয় ৬৫০ টাকা করে। ঈদ বা কোনো উৎসব এলেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয় কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ সময় তাদের আসা অথবা যাওয়ার কোনো একটা পথে যাত্রী কম হয় বলে পুষিয়ে নিতে এমনটা করেন। তবে তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে এক টাকাও বেশি নেন না।

সরেজমিন নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গেলে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বরিশাল কাউন্টার থেকে ঢাকার টিকটি কাটা মাহাবুব লাবু (টিকিট নং-৩৩৮১৬) ও মো. সাইফুল ইসলাম (টিকিট নং-৩১৮৯৩) তাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। উল্লিখিত নম্বরের টিকিটের গায়ে সরকার নির্ধারিত ৫২০ টাকার স্থলে সাড়ে ৫ শ’ করেই লেখা রয়েছে। যাত্রীপ্রতি ৩০ টাকা বাড়তি নেওয়ার কথা যাত্রীরা জিজ্ঞাসা করলে কাউন্টার থেকে বলা হয় ঈদ বলে তারা একটু বাড়তি নিচ্ছেন। তারপরও কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় বলে জানালেন উপস্থিত যাত্রীরা।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বরিশাল কাউন্টার ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা তাদের দেওয়া হয়নি। ঢাকা থেকে সাড়ে ৫ শ’ টাকা করে আসার ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে তারা বরিশাল থেকে ঢাকায় যাবার ভাড়াও একই হারে সাড়ে ৫ শ’ টাকা করেই নিচ্ছেন। এটা তাদের মালিক নির্ধারিত ভাড়া। অন্য পরিবহন কম নিয়ে থাকলেও সেটা তাদের দেখার বিষয় নয়।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি নেওয়ার অভিযোগ পেয়েই তিনি বাস টার্মিনালে বিআরটিএর একজন পরিদর্শককে পাঠিয়েছেন। তিনি গিয়ে গোল্ডেন লাইন পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। সে অনুযায়ী বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন ও সকল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারদের ডেকে তাৎক্ষণিক সভা করে বাড়তি ভাড়া নিতে নিষেধ করেছেন। আর গোল্ডেন লাইন ম্যানেজারকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটির সভাপতি বরিশাল জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান জানান, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন, যাতে করে বাড়তি ভাড়া না নিতে পারে। বাড়তি ভাড়া বন্ধে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস-মালিক সমিতির সভাপতি মো. আফতাব হোসেন বলেন, পরিবহনের এ ভিড় সপ্তাহজুড়ে থাকবে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে কোনো পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.