আদালতে দণ্ডিত হলেও সাজা কার্যকর হয়নি খুলনা আওয়ামী লীগ নেতার

প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সহ-সভাপতি, খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব ও  খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা মামলায় জরিমানাসহ ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সাজা কার্যকর করেনি।

প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ী এখনো আত্মসমর্পণ করেননি বা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেননি। তিনি মুক্ত অবস্থায় তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গেও তিনি স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন।

চট্টগ্রামের ডাবল মুরিং থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের  বিচারক মো. জামিউল হায়দার ১৩ সেপ্টেম্বর পলাতক আসামি মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সাইফুল ইসলামকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। ১৮৮১ সালের দ্য নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারার বিধানমতে আসামিকে এ সাজা দেয়া হয়।

২০০৮ সালে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম প্রদত্ত চেক নগদায়ন করতে না পেরে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

রায়ে বলা হয়, আসামির আদালতে আত্মসমর্পণ কিংবা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হবার তারিখ হতে এ সাজার মেয়াদ গণনা শুরু হবে। আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সাজ পরোয়ানা ইস্যু করারও নির্দেশ দেন আদালত। রায়ের অনুলিপি চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানোর নির্দেশও দেন আদালত। রায়ের ভিত্তিতে চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৬ সেপ্টেম্বর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠায় (স্মারক নং ৮৯৬৫ তাং ১৬.০৯.২০১৫)।

মামলায় সাইফুল ইসলামের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে: মো. সাইফুল ইসলাম, মালিক, এমভি আমিনুল ইসলাম নামক জাহাজ প্রতিষ্ঠান মেসার্স নয়ন এন্টারপ্রাইজ, ৯ এসি মার্কেট, ডাকবাংলা, খুলনা এবং মাতৃছায়া, পূর্ব বানিয়া খামার মেইন রোড় ,খুলনা সদর থানা।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, বিষয়টি সাউথ জোনের আওতাভুক্ত। এ বিষয়ে ডিসি সাউথ ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

কেএমপির ডিসি সাউথ জাহাঙ্গির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই ধরনের কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা এসেছে কিনা তা কেউ তার নজরে আনেননি। তাই তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

খুলনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবু সুকুমার বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই গ্রেফতারি পরোয়না তার থানায় এখনো আসেনি। তিনি জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানা কেএমপিতে আসবে, তারপর মহানগর হাকিম আদালত হয়ে তাদের থানায় আসবে।

khulna awami leage leader saiful islam
বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফি বাতিল চেয়ে ৭ অক্টোবর সাইফুল ইসলামসহ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি।

এ ব্যাপরে খুলনা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. রজব আলী সরদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সাজার রায় ঘোষণার পর আত্মসমর্পণ বা রায় উচ্চ আদালতে স্থগিত ছাড়া  প্রকাশ্যে চলাচল সঠিক নয়। এতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতের অভিযোগ উঠে। তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলা উচিত।

এ্যাড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার বাদী চট্রগ্রামের আলহাজ সেলিম নবী সওদাগর জানান, রায় ঘোষণার পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা খুলনায় পাঠিয়েছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তা তামিল না হওয়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। তিনি জানান, এই রায় ঘোষণা ছাড়াও আরো একটি মামলায় সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের আদেশ রয়েছে। তিনি বলেন,  রায় বলবৎ থাকার পর প্রকাশ্যে প্রশাসনের সাথে উঠা-বসা আইনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামিল। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন।

রায় ঘোষণার পর এ্যাড. সাইফুল ইসলাম দলীয় এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। তিনি প্রকাশ্যে সভা, সমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলনও অংশ নিচ্ছেন। বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফি বাতিলের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। গত ৭ অক্টোবর একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করেন তিনি। এ সংবাদের ছবি ৮ অক্টোবর খুলনার স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.