সমুদ্রস্নান থেকে এখনো ফেরেনি মামুন

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রস্নানে নেমে নিখোঁজ বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র মাহামুদুল হাসান মামুনের খোঁজ মেলেনি।

বরিশাল মেডিকেল কলেজের ৪৫তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন বৃহস্পতিবার দুপুরে তার সঙ্গীদের সাথে সাগরে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়। মামুনের বাড়ি গাজীপুর জেলায়।

barisal medical student mamun missing in seaঘটনার পর কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং স্থানীয়রা একাধিক ট্রলারে করে নিখোঁজ মামুনের সন্ধানে সাগরের বিভিন্ন মোহনায় খুঁজে বেড়ালেও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায়ও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

সাঁতার না জানার কারণে সমুদ্রের ভাটার টান তাকে গভীর সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে–এ ধারণা নিয়ে সাগরে বিভিন্ন মোহনায় তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ছেলের সন্ধানে গাজীপুর থেকে মামুনের পিতা আবুল হাসেম ও তার স্বজনরা শুক্রবার দুপুরে কুয়াকাটা এসেছেন। তারাও সৈকতের বিভিন্ন মোহনায় খুঁজে ফিরছেন।

মামুনের কাকা সুরুজ মিয়া জানান, শ্যামপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসেম মিয়ার দুই সন্তানের মধ্যে বড় মামুন। তার ছোট ছেলে ঢাকা কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। মামুন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে তিন বছর আগে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়।

মামুনের মামা সাদিউল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকালে মামুন তার মা মাহমুদা বেগমকে ফোন করতো। ১০/১৫ মিনিট কথা বলতো। শারীরিক খোঁজ-খবর নিতো। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে মামুন আর ফোন করেনি। তার মা কয়েকবার মামুনকে ফোন করলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন পায়। কিন্তু বিকেলে তারা জানতে পারে মামুন কুয়াকাটায় বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে সাগরে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়। তিনি বলেন, ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তার মা শয্যাশায়ী। একটু পরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।

বরিশাল মেডিকেল কলেজের রেডক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাবের বার্ষিক ট্যুরে ৫১ জন ছাত্র ও চার জন স্টাফ কুয়াকাটা আসে বৃহস্পতিবার। ক্লাব সভাপতি সাজিদুল করিম সাজিদ এ ট্যুরের নেতুত্ব দেন। কিন্তু সাগরে গোসল শেষে অধিকাংশ ছাত্র হোটেলে ফিরে গেলে মামুন কয়েকজন সঙ্গীর সাথে বিকাল তিনটা পর্যন্ত সৈকতেই ছিল। তারা গাড়ির চাকার টিউব নিয়ে সাগরে ভাসতেছিল।

ক্লাব সভাপতি সাজিদুল করিম সাজিদ জানান, তাদের এ সফর ছিলো পূর্বনির্ধারিত। কিন্তু কখন কীভাবে মামুন সাগরে ভেসে গেছে তা কেউই জানাতে পারেনি এবং সৈকতে শতশত লোক থাকলেও কেউই বিষয়টি খেয়াল করেনি। তবে কুয়াকাটা সফরের আগে তারা কলেজ অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন এই সফরে কোনো অফিসিয়ালি অনুমতি নিতে হয় না।

বরিশাল মেডিকেলের অধ্যক্ষ ভাস্কর সাহা সাংবাদিকদের জানান, কুয়াকাটা সফরে যাওয়ার আগে রেডক্রিসেন্ট ক্লাবের পক্ষ থেকে কেউ অনুমতি নেয়নি। ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার পর মোবাইল ফোনে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় আছেন। বরিশাল এসে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘ বছর ধরে মাছ শিকার করেন এমন জেলে আলী হোসেন ও আলমগীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের এক দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বিশাল চর জেগে উঠেছে। এ কারনে ভাটার সময় স্রোতের টান বেশি থাকে। তাদের ধারণা সাগরে তলিয়ে থাকায় মামুনের দেহ হয়তো গঙ্গামতি কিংবা কোনো নদী মোহনায় ভেসে যেতে পারে। সে যদি সাগরে তলিয়ে থাকে তাহলে আগামী ১০/১৫ ঘন্টার মধ্যে যে কোনো স্থানে তার দেহ ভেসে উঠবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি মীর ফাসিউর রহমান ও নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সঞ্জয় মন্ডল জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা খুঁজেছেন। কিন্তু মামুনের সন্ধান মেলেনি। তাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.