আজিজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ধান গবেষক বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত চারটি নতুন জাতের ধানের সফল ফলন হয়েছে।
হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম নামের চার জাতের ধান রোপণের পর আশ্বিন মাসে ফসল কাটা হয়েছে।
বুধবার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর স্যুইস ভ্যালি রিসোর্টে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে নতুন চারটি জাতের ধানের সফল ফলন পাওয়ার কথা জানান জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী।
ড. চৌধুরী জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করে দেশি জাতের ধান থেকে ব্রিডিং করে এসব নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। জাতগুলোর নাম রেখেছেন হাফিজা ১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম ধান।
জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পৃথকভাবে চারটি জাতের জন্য বীজতলা তৈরি করে ধান বোনা হয়। বীজতলায় বীজ বপণ, চারা রোপণ ও ফসল তুলতে সময় লেগেছে ১০৮ দিন। এটা প্রচলিত উচ্চফলনশীল জাতগুলোর জীবনকাল থেকে কম, প্রচলিত জাতগুলোর জীবনকাল সাধারণত ১৩৫ থেকে ১৪০ দিন।
আমন মৌসুমে চাষ করা হয়েছে বলে চার জাতের ধান চাষে কোনো বাড়তি সেচের দরকার হয়নি। বছরের অন্য সময়েও এই চার জাতের ধান চাষা করা যাবে বলে জানান তিনি।
স্বাভাবিক সময়ের প্রায় এক মাস আগেই ফসল সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে আশপাশের কৃষকরা আগামীতে এসব জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
ড. চৌধুরী আরো বলেন, হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম ধান কাটার সময় নতুন গোছা গজানোর মতো নাড়া রেখে কাটলে একই মাঠ থেকে ৪৫ দিন পর আবার ফসল সংগ্রহ করা যাবে।
উদ্ভাবিত চার জাতের ধান সম্পর্কে ইতোমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন তিনি।
এবারের ফসল থেকে তিনি বীজ সংগ্রহ করবেন। আর আগামীতে যাতে এলাকার আগ্রহী কৃষকরা এসব ধান চাষ করে সফলতা পায় সে জন্য তিনি প্রয়োজনে কৃষকদের বীজ প্রদানসহ সার্বিক সহায়তা করবেন বলে জানান।
মতবিনিময় সভায় জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী ও তার সহযোগী মজিবর রহমান উদ্ভাবিত নতুন ধান সম্পর্কে পৃথকভাবে ব্যাখ্যা দেন।
হাফিজা ১ : ২১ জুন ২০১৫ থেকে হাফিজা ধানের বীজতলা তৈরি করে ৩০ দিন পর চারা তুলে প্রদর্শনী মাঠে রোপণ করা হয়। রোপণের পর এক কিয়ার (৩০ শতক) জমিতে একবার মাত্র ১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। কীট আক্রমণ প্রতিরোধে হালকাভাবে একবার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। হাফিজা ১ ধান ২ মাস ২২ দিন পর ১৫ অক্টোবর (৩০ আশ্বিন) কাটা শুরু হয়। এ জাতের ধান গাছ উচ্চতায় ৮০ সেন্টিমিটার। এক কিয়ারে ফলন পাওয়া গেছে ১২ মণ।
জালালিয়া : ২৬ জুন ২০১৫ জালালিয়া ধানের বীজতলা তৈরি। ২৬ দিন পর বীজতলা থেকে চারা ৩১ জুলাই মাঠে রোপণ। হাফিজা ১ এর মতো ইউরিয়া ও হালকা কীটনাশক প্রয়োগ। দুই মাস ২০ দিন পর ধান কাটা। জালালিয়া ধান গাছের উচ্চতা ৭৫ সেন্টিমিটার। এক কিয়ার জমিতে ফলন ১৪ মণ।
তানহা : বীজতলায় বীজ বোনা হয় ২৬ জুন ২০১৫। সার ও কীটনাশক আগের দুটি জাতের মতো প্র্রয়োগ। এ জাতের ধানে পাখির আক্রমণ বেশি হয়েছে বলে এক কিয়ার জমিতে ১০ মণ ফলন পাওয়া গেছে। এ ধান গাছের উচ্চতা ১১০ সেন্টিমিটার।
ডুম : বীজতলায় বীজ বোনা ২৬ জুন ২০১৫। ২৬ দিন পর ৩১ জুলাই চারা রোপণ। সার-কীটনাশক আগের মতোই। এ জাতের ধানেও পাখির আক্রমণ বেশি হয়েছে। ফলন পাওয়া গেছে ১১ মণ। ডুম ধানটি আকারে অনেকটা বাঁশমতি ধানের মতো।
মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, কীভাবে দেশীয় ধান সংরক্ষণ করা যায়, বিলুপ্তপ্রায় ধান খোঁজে বের করা ও দেশীয় ধান থেকে কোনো প্রকার হাইব্রিড পদ্ধতিতে না গিয়ে ব্রিডিং করে নতুন ধান উদ্ভাবন করা যায় তিনি সেই চেষ্টা করছিলেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে অগ্রহায়ণে নতুন ফসল ঘরে তুলে নবান্ন করা হয়। আর অগ্রহায়ণের আগে দেশের বেশির ভাগ কৃষকের ঘরে তেমন খাদ্য থাকে না। তার উদ্ভাবিত ধান আগে ঘরে উঠবে খাদ্য সংকট কাটাতে সাহায্য করবে।
কৃষি কর্মকর্তার কথা: জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর নতুন চার জাতের ধান সম্পর্কে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, তিনি এই চার জাতের ধান দেখেছেন। এটি দেশের জন্য একটি সুখবর। তার এ চার জাতের ধান কৃষক, সমাজ ও দেশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।