আজিজুল ইসলাম, (কুলাউড়া) মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের বড়ছড়ার দু’তীরে লাগানো কয়েক’শ গাছ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে উজাড় করার পাঁয়তারা চলছে। ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পাড় ধসে গাছ উল্টে পড়ে ছড়ায়। পরে কে বা কারা তা কেটে নিয়ে যায়।
ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, চৈত্র কিংবা বৈশাখ মাসে কাঠফাটা রোদে হাওরে কাজ করে ক্লান্ত শরীরে এসব গাছের নিচে বসে একটু আরাম করতাম। শরীরটায় শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতো ঠান্ডা বাতাস। কিন্তু আর মনে হয় বেশি দিন সেই শান্তির পরশ পাওয়া যাবে না। হাওর থেকে মানুষ গাছের নিচে বসতো আর পাখিরা গাছের ডালে বসে কিচিরমিচির শব্দে এলাকা মুখরিত করে রাখতো। গোটা এলাকায় ছিলো শান্তির পরশ। আস্তে আস্তে সব গাছ ওরা কেটে নিয়ে যাবে।
কৃষক রেজান আলী, হবিব মিয়া, তেরাব আলী বলেন, গাছগুলোর যদি ভাষা থাকতো তাহলে তাদের বাচাঁর আকুতিতে আকাশ বাতাস ভারি হতো। তাদের বোবা কান্না আমাদের কান ভেদ ক
রে না। যে কয়টি গাছ এখনও রয়েছে, হয়তো একসময় তাও আর থাকবে না।
সিডব্লিউবিএম প্রকল্প এবং এলাকাবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, হাকালুকি হাওরে পরিবেশ অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন কোষ্টাল ওয়েটল্যান্ড এন্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প (সিডব্লিউবিএম) এর আওতায় ২০০৮ সালে আকিলপুর থেকে হাকালুকি হাওরের দিকে ২কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ৮ হাজার গাছের চারা লাগানো হয়েছিল। লাগানো গাছের চারার মধ্যে কদম, মেহগনি, জারুল, হিজল ও করচের চারা ছিল। প্রায় সাত বছর পরে সেই ছোট ছোট চারাগুলো এখন বড় হয়েছে। কিন্তু সেই গাছগুলো এখন রক্ষার দায়িত্বে নেই কেউ। গত জুন মাসে পরিবেশ অধিদফতরের সর্বশেষ প্রকল্প সিবিএ-ইসিএ প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়েছে। ফলে অভিভাবকহীন গাছগুলোর উপর লোলুপ দৃষ্টি এখন বালু খেকোদের।
বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইছহাক চৌধুরী ইমরান জানান, প্রতারণা করে বড়ছড়ার এই সাধারণ বালুকে সিলিকা বালু নামে খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা এনে দ্বিগুণ এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে ইজারাদার। এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন এলাকাবাসী। অপিরকল্পিতভাবে বর্ষা মৌসুমে বালু উত্তোলনের ফলে শুষ্ক মৌসুম আসতেই গাছগুলো উপড়ে এবং ছড়ার বাঁধ ভেঙে পড়ছে। ইজারাদারের আড়ালে ক্ষমতাসীন দলের এক বড় নেতার পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় প্রশাসন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ আমি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। বালুর ব্যাপারে আমরা একটা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণও করেছি। এখন দেখি কি সিদ্ধান্ত আসে। তাছাড়া গাছের ব্যাপারটাও আমাদের নজরে এসেছে। যদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত না দেয়, তাহলে স্থানীয়ভাবে আমরা কি করা যায় তখন ভাববো’।