৩০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে মাড়াই মৌসুম শুরু করল রাজশাহী চিনিকল

প্রতিনিধি, রাজশাহী: মৌসুমের সঠিক সময়েই এবার রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর উপর গত কয়েক বছরের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা আছে। ঋণের বিশাল বোঝা সামলানো আর আখের জোগান নিয়ে শুরুতেই চিন্তিত চিনিকল কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী চিনিকল সূত্র জানায়, এ বছর চাষিরা মিলজোন এলাকায় ২০ হাজার একর জমিতে আখ চাষের টার্গেট নিলেও উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৫ একর জমিতে। আর আখের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। আর এবারের চিনি আহরণের অনুপাত ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মিলগেটে প্রতি মণ (৪০ কেজি) আখের দাম ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। তারপরেও আখের প্রাপ্যতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একদিকে আখের চাষ কম, অন্যদিকে কৃষকদের আখ সরবরাহে অনিহার কারণে চিনিকল নির্ধারিত দিন পর্যন্ত চলবে কি না এ নিয়েও দেখা দিয়েছে সন্দেহ। তবে চিকিকল কর্তৃপক্ষের দাবি এ মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চেষ্টা চালানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখনো মিলে মজুত আছে ৫ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন চিনি। যার আনুমানিক মূল্য ৪০ কোটি টাকা। শুধু গত (২০১৪-২০১৫) মৌসুমে রাজশাহী চিনিকলে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।

চিনিকল সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের আগে রাজশাহী চিনিকলের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মে.টন। তার আগে থেকেই বিভিন্ন কারণে আখ চাষের ক্ষেত কমতে থাকে। তখনই আখের অভাবে ১৫ মে.টন চিনি উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। এরপরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত এ মিলের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মে.টনে উন্নীত হয়। পাশাপাশি বেড়ে যায় জনবল। যার ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের পর থেকেই রাজশাহী চিনিকল লোকসানের মধ্যে পড়ে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে।

এদিকে বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা নিয়েই শুক্রবার বিকেলে চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প সচিব বলেন,  চিনিকলে লোকসান কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নর্থবেঙ্গল চিনিকলকে ডিসটিলারিজের আওতায় আনা হয়েছে। সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, জৈব সার, জুসসহ নানা ধরনের সামগ্রী উৎপাদন করা হবে। এতে করে লোকসান কমবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘সাদা চিনির চেয়ে আমাদের এই চিনিতে মিষ্টতা অনেক বেশি। সাদা চিনিতে নানা রকমের কেমিকেল থাকলেও আমাদের মিলের চিনিতে তা নেই।’

এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, দেশের অন্যান্য চিনিকলের পাশাপাশি রাজশাহী চিনিকলকেও আধুনিকায়ন করা দরকার। পুরাতন মেশিনারিজের জন্য লোকসানের বোঝা ভারি হচ্ছে। দেশের এ শিল্পের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফেরাতে হলে অবশ্যই চিনি আমদানি রোধ করতে হবে। শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ব্যবসায়ীদের মুনাফার জন্যই র-সুগার আমদানি হচ্ছে এবং এ খাতে লোকসান বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.