আজিজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে গত এক যুগেরও বেশি সময়ে ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু হাওর ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও হুমকিসমূহের খুব একটা সুরাহা হয়নি। তাছাড়া হাওর ব্যবস্থাপনার জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় সমস্যা ও হুমকিসমূহ আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন হাওরে উন্নয়নে জড়িতরা।
হাকালুকি হাওর মুলত দুটি প্রশাসনিক জেলা মৌলভীবাজার ও সিলেটের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ এই ৫টি উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। বর্ষায় প্লাবিত এলাকাসহ হাওরের মোট আয়তন হয় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর। আর শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী জলাভূমির (বিল) আয়তন প্রায় ৫ হাজার হেক্টর। পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ২লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের জীবন জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাওরের উপরই নির্ভরশীল। হাওরের উপর নির্ভরশীল এসব মানুষের জীবিকার দুটি প্রধান উৎস হলো মৎস্য ও কৃষি। ১৯৯৯ সালে সরকার এই হাওরকে ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া) হিসেবে ঘোষণা করে। এটি শুধু এশিয়ার বৃুহত্তম হাওরই নয়, দেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র।
২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই হাওরে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সরকার, এনজিও এবং স্থানীয় সমাজের লোকদের সহযোগিতায় ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
সামাজিক সুরক্ষা (সিবিএ-ইসিএ) প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসেই শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সামগ্রিক হাওর মহাপরিকল্পনা হয় কিন্তু সরকার হাকালুকি হাওরের ভবিষ্যত কার্যক্রমের জন্য কোন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।
হাকালুকি হাওরকে মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্দোলনকারী হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির সভাপতি সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশাহ জানান, হাকালুকি হাওরকে সামগ্রিক হাওর মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনেক আন্দোলন করেছি। পরবর্তীতে অনেক প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে সেই আন্দোলন স্থিমিত হয়। সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হওয়াটা হতাশার। এর প্রভাবও হাওরের উপর পড়বে।
হাওরের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ইউএসএআইডি’র ক্রেল প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, হাওর ব্যবস্থাপনার জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় সমস্যা ও হুমকিসমূহ আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের মাধ্যমে যেসকল কাজ হয়েছে, সেগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামগ্রিক হাওর মহাপরিকল্পনায় না থাকলেও এশিয়ার এই বৃহত্তম হাওরকে নিয়ে সরকারের উচিত আলাদাভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা। আর তা সরকারের নজরে আনতে হবে।