চরআলগী গণহত্যা দিবস: পাকবাহিনী সাড়ে ৫’শ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়; হত্যা করে ৪৭ জনকে

আতাউর রহমান মিন্টু, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ): আজ ১৫ নভেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্থানী হানাদার ও তাদের তাবেদার রাজাকার, আলবদর বাহিনী গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের ৩৫টি পাড়ায় নারকীয় তা-ব চালিয়ে হত্যা করে ৪৭ জন নিরাপরাধ মানুষকে, আগুনে পুড়িয়ে ভষ্মিভূত করে প্রায় সাড়ে ৫’শ বাড়ি। বর্বর পাকবাহিনীর হত্যাকা- থেকে রেহাই পায়নি কোলের শিশু থেকে শুরু করে মসজিদের মুসল্লিরাও।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তখন ব্রম্মপুত্র নদে জোয়ারের পানি। তাই উপজেলা সদর থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা হিসেবে চরআলগী ইউনিয়নকে নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে বেছে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা মফিজ আহমেদ জানান, তখন চরআলগীতে প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়ে অবস্থান করছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে চরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়শই গফরগাঁও, নান্দাইল ও হোসেনপুর উপজেলা সদরে অবস্থানরত পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে নাস্তানাবুদ করছিল।

১৪ নভেম্বর হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় গুপ্তচরের মাধ্যমে খবর পায় চরআলগীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি অংশ নান্দাইল সদরে চলে গেছে যুদ্ধ করতে। এ সুযোগে ১৪ নভেম্বর শেষ রাতে পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার মফিজ ও তার ছেলে বাবুলের সহযোগিতায় চরকামারিয়া এলাকা দিয়ে ঢুকে পড়ে চরআলগীতে। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু অস্ত্র ও লোকবলের অভাবে হানাদার বাহিনীকে ঠেকাতে না পেরে পিছু হটে পার্শ¦বর্তী নান্দাইল উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ বাজারে আশ্রয় নেয়। আর পাক হায়েনার দল ঝাপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত অসহায় চরবাসীর উপর।

একদিকে গুলি অন্যদিকে আগুন। সারাদিন চলে এ তা-বলীলা। একদিনে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চরাঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনী এবং এদেশীয় রাজাকাররা সাড়ে ৫’শ বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে গোটা এলাকাকে পরিণত করে বিরান ভূমিতে। এ তা-বলীলা চালানোর সময় পাক হায়েনার দল মসজিদ থেকে ধরে এনে আলিম উদ্দিন সরকার, আমির উদ্দিন মাষ্টার, ইউনুস আলীসহ ৪৭ জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আহত হয় আরো অনেক। আহত অবস্থায় কেউ কেউ আজো বেঁচে আছেন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে।

স্বাধীনতার মাত্র ১ মাস পূর্বে চরআলগীবাসীর জীবনে যে লোমহর্ষক বর্বর ঘটনা ঘটেছিল তা আজো ভুলতে পারেনি চরআলগী তথা গফরগাঁওবাসী। তাই এ দিনটিতে প্রতি বছর চরআলগী ইউনিয়নের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আয়োজন করে স্বরণ সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.