১০ বছরেও খুঁজে পাওয়া যায়নি নেত্রকোনা বিস্ফোরণের নেপথ্য নায়কদের

মীর মনিরুজ্জামান , নেত্রকোনা: আজ ৮ ডিসেম্বর।  ২০০৫ সালের এই দিনে জেএমবি জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল নেত্রকোনা। প্রাণ হারায় আটজন নিরীহ মানুষ। আহত হয় আরো অর্ধশতাধিক মানুষ।

নেত্রকোনা ট্র্যাজিডির ১০ বছর পার হলে আজো জঙ্গিদের মদদদাতা ও আশ্রয়দাতা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে আটার দিকে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে যখন কাজে যাচ্ছিল ঠিক তখনই জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলায় কেঁপে ওঠে নেত্রকোনা শহর। শহরের অজহর রোডে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও শতদল শিল্পী গোষ্ঠীর কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হন জেলা উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলী, ভিক্ষুক জয়নাল, গৃহবধূ রানী আক্তার, মোটর ম্যাকানিক যাদব দাস, দিনমজুর রইছ মিয়া, রিকশাওয়ালা আফতাব উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা এক যুবক। এ হামলায় আহত হন ৫০ জনের ওপরে।

ঘটনার পর পরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ‘নিউ ডাইমেনশন’ বলে হিন্দু জঙ্গিবাদের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু মিডিয়ার কারণে জনসমক্ষে জেমএমবি কথা উঠে আসে।

এ ঘটনায় পুলিশ জেএমবির বাংলা ভাইসহ ছয় জন জঙ্গির বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা করে। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ঢাকা-২ আদালতের বিচারক দুইটি মামলার রায়ে তিন জঙ্গি সালাউদ্দিন, আসাদ্জ্জুামান ও ফাহিমাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। অপর আসামি কাউছার আহম্মেদ বেকুসুর খালাস পায়।  বাংলা ভাই ও জঙ্গি সানির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

ten years of netrakona blastতবে নেত্রকোনার সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অভিযোগ, জঙ্গিদের স্থানীয় আশ্রয়দাতারা আজো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। স্থানীয় আশ্রয় ও মদদদাতারাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে নেত্রকোনাবাসী বোমা হামলার পর থেকে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনেরাসহ সাধারণ মানুষ।

সে দিনের বোমা হামলায় আহত নেত্রকোনা জেলা উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন ভুইয়া জানান, জঙ্গিদের স্থানীয় আশ্রয়দাতাদের খুজে বের করতে না পারায় এখনো  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলার আশংকা রয়ে গেছে।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ আবু নাসের  বলেন, বোমা হামলার ঘটনায় জঙ্গিদের বিচার হয়েছে। আবারো জঙ্গি হামলার মতো ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশ তৎপর রয়েছে।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ট্র্যাজিডি দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে নেত্রকোনা ট্র্যাজিডি দিবস উৎযাপন কমিটি । এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে নিহতদের স্মরণে নির্মিত শহরের অজহর রোডে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন ,কালো ব্যাজ ধারণ, প্রতিবাদী মিছিল, সকাল পৌনে এগারোটায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিটের স্তব্ধ নেত্রকোনা কর্মসূচি পালন করা হয়। ট্র্যাজিডি দিবস উৎযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে সকল স্তরের মানুষ অংশ নেন।

সকালে জেলা উদীচীর সভাপতি মোজাম্মেল হক বাচ্চু  ,জেলা পরিষদের প্রশাসক মতিয়র রহমান, পৌর মেয়র প্রশান্ত কুমার রায়সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.