প্রতিনিধি, রাজশাহী: ইতিহাসবিদ এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তুলে ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে কটূক্তি করে খালেদা জিয়া এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশের জন্মকে অপমান করেছে। তরুণ প্রজন্মকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ইতিহাস বিকৃতিকারী হেফাজত-জামায়াত-বিএনপিকে কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আমীর উদ্দীন গ্যালারিতে আয়োজিত একক বক্তব্যের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের অন্যতম সোচ্চার কণ্ঠ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের এই একক বক্তব্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুনের ভক্তবৃন্দ।’ এতে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ সহস্রাধিক তরুণ-তরুণী অংশ নেন।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের মৃত্যুতে ত্রিশ লাখ পরিবার ছারখার হয়ে গেছে। ছয় লাখ নির্যাতিত নারীর সঙ্গে তাদের পরিবারের স্বপ্নও ছারখার হয়েছে। অথচ বিএনপির নেত্রী খালেদা শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতেছেন। তিনি বলেন, হেজাবিরা (হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি) প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি শুরু করে। এরপর মানুষের চিন্তা-চেতনাকে নষ্ট করেছে। তারপর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করেছে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচাতে চায়, তারা আর যাই হোক মানুষের বাচ্চা না।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বর্তমান সরকার মনোজগতে আধিপত্য বিস্তারের থেকে উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। পদ্মা সেতু হবে কিন্তু বাংলাদেশ রাজাকার-আলবদরদের দখলে চলে যাবে। তাই উন্নয়নের পাশাপাশি মনোজগতে আধিপত্য বিস্তারেও মন দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানের রাজনীতি করছে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে পারলেই সেটা সম্ভব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের ছাত্র সংগঠন শিবির কী করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করে! কেউ মদদ না দিলে সেটা সম্ভব হতো না। এছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেখানে কিছু কাজ করবো। দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করার বিষয়ে চার বছর ধরে প্রস্তাব দিয়ে আসছি। কিন্তু তারা রাজি হননি। তিনি বলেন, এদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় না। সরকারি-বেসরকারি কলেজে ইসলামের ইতিহাস পড়ানো হয়, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় না। আমি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়ে স্কুল-কলেজে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। ফলে হেজাবিরা (হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ পাচ্ছে।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জীবনে প্রশ্ন করতে পারা হলো বড় কাজ। প্রশ্ন করা মানে এগিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্ন করেছেন, তাই তিনি সফল হয়েছেন। এখনকার রাজনীতিবিদরা প্রশ্ন করতে বা শুনতে চান না। নেতা যা বলেন তারা সেটাই করেন। তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো ভালোবাসা। আমাদের এদেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। এটা ধর্মেও আছে।