জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমর্থক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করেছে উপ-উপাচার্য গ্রুপের কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোর্শেদসহ ৫ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। উভয় গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হাকিম সরকার এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমানের সমর্থক আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বুধবার পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। এই কর্মসূচির প্রাক্কালে এক পক্ষের কর্মকর্তারা অপর পক্ষের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করেন।
সকাল থেকেই উপ-উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজুর গ্রুপের ক্যাডাররা শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ রামদা-অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরের পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম গ্রুপের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় টেন্টে অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপ-উপাচার্যপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তা, ছাত্রলীগের ক্যাডার ও বহিরাগতদের নিয়ে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের মানববন্ধনে বাধা দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্য সমর্থক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কর্মকর্তা মীর মোর্শেদসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পূর্ব ঘোষিত মানববন্ধনে যোগদানের জন্য প্রশাসন ভবন থেকে বের হয়। এ সময় আগে থেকেই প্রশাসন ভবনের গেটে অবস্থানরত উপ-উপাচার্য সমর্থক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন খান, উপ-উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী আ. হান্নান, আসাদুজ্জামান মাখন, গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন কর্মকর্তা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এ সময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহকারী রেজিস্ট্রার মীর মোর্শেদ, এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার ও ইবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশিদ, উপাচার্যের পিএস ও ইবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, রেজিস্ট্রারের পিএস আনোয়ার হোসেন ও রেজাউল নামে একজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মোর্শেদের অবস্থা গুরুতর।
আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও এস্টেট শাখার কর্মকর্তা হারুনের অফিসেও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। এ নিয়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের অপসারণের দাবি করে মানববন্ধন করে উপ-উপাচার্য সমর্থকরা।
পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমানের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে উপাচার্য গ্রুপের কর্মসূচির প্রতিবাদে একই সময় পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উপ-উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের একাংশ। তারা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চেষ্টার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে।
হামলায় আহত উপাচার্য পক্ষের কর্মকর্তা মীর মোর্শেদ বলেন, মানববন্ধনে অংশ নিতে যাওয়ার সময় তাঁদের ওপর হামলা হয়। প্রশাসন ভবন থেকে বের হওয়ার সময় উপ-উপাচার্য পক্ষের কর্মকর্তা উপরেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন ও উপ-উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. হান্নানের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন এই হামলায় অংশ নেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন কর্মসূচি থাকায় একটু হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যপন্থী শাপলা ফোরামের সভাপতি ড. মাহবুবুল আরফিন বলেন, ন্যাক্কারজনকভাবে বর্তমান প্রো-ভিসির ইন্ধনে আমাদের কর্মকর্তাদের উপর হামলা করেছে। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এছাড়া বর্তমান প্রো-ভিসি পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে হামলা চালিয়েছে। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে হমলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, যেহেতু উভয় গ্রুপের মধ্যে একটু মতবিরোধ হয়েছে। তাই সবাই যাতে নির্বিঘেœ মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় সেজন্য প্রক্টরিয়াল বডি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
ইবি থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন জানান, মানববন্ধন শুরুর পরপরই ব্যক্তিগত আক্রশের জেরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।