সম্পদের সদ্ব্যবহার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়- আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করা গেলে মানুষ তার সুফল পায়। আর এই ফল নিশ্চিত করতে হলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয় এবং তাদের বিভিন্ন চাহিদা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পূরণের জন্য আমরা পর্যায়ক্রমে কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছি।

kawkhali-pic-06-05--01
মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কাউখালীর সদর ইউনিয়নের জয়কুল আশ্রায়ণ প্রকল্প এবং বাশুরী গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের শুভ উদ্বোধন করেন

তিনি শুক্রবার পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত কয়েকটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, আজ গ্রামে গ্রামে মানুষের বিদ্যুৎ চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য তারা আমাদের কাছে যেমন দাবি উত্থাপন করেন, আবার তা দ্রুত পাওয়ার জন্য অধীর হয়ে ভুল প্রক্রিয়ায় প্রতারিত হন। স্থানীয় নেতৃত্ব তথা আমরা যারা ক্ষমতায় রয়েছি তারা মানুষের এই ন্যায্য পাওনাকে নিশ্চিত করতে একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০১৮ সালের মাধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে অঙ্গীকার করেছেন তার প্রতি সম্মান ও আনুগত্য দেখিয়ে সকলকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করলে ঠকার আশঙ্কা থাকে। আমরা এ অঞ্চলে আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে একটি ধারাবাহিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আজ থেকে ৩২ বছর আগে এ অঞ্চলে মানুষ রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাবি তুলতেন। এ ক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হওয়ায় এখন তাদের বিদ্যুতের দাবি উন্নয়ন আকাঙ্খারই প্রকাশ। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া ব্যয় সাপেক্ষ ও অনেকটা কষ্টসাধ্য। কারণ এখানে বাড়ি-ঘরগুলো ঢাকা শহরের মত পাশাপাশি না থাকায় সেখানে বিদ্যুৎ লাইন ও সংযোগ দেওয়া যেমন খরচের, তেমন সময় সাপেক্ষও। তাই বিশেষতঃ  উপজেলা সদর ও গ্রামগুলোতে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তুলতে পারলে বিদ্যুৎসহ সকল সেবা প্রদান সহজ হয়। তা না হলে সরকারের সম্পদ নষ্ট হয়। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন কাজ তরান্বিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতৃত্বের বরাদ্দকৃত সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রামের মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। আগে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন হওয়ায় তা কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনমান বাড়াতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তথা রাজনীতিবিদদের আরও কল্যাণমূখী হয়ে মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করার বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে। মানুষকে আরও পরিশ্রমী হওয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিনে ১৮ ঘন্টা কাজ করেন। আমরাও ১৫/১৬ ঘন্টা কাজ করি।

মন্ত্রী আরও বলেন, বেকুটিয়া সেতু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টির কোনও সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বেকুটিয়ায় এ সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যারা এ নিয়ে ভিন্ন কথা বলেন তাদের মতলব অন্য। ৩০ বছর ধরে আমরা দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সকল অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করে আসছি। যার সুফল ও স্বীকৃতি সবার জানা। বিশেষতঃ যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে আমরা সব সময় সুবিবেচনা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। অসংখ্য ছোট-বড় সেতু, সড়ক, মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ যথাযথ পরিকল্পনার অধীনে সম্পন্ন হয়েছে। কঁচানদীতে সেতু নির্মাণের স্বপ্ন ও উদ্যোগ আমাদেরই। এ ক্ষেত্রে  এ নদীর যথোপযুক্ত পয়েন্টেই সরকার সেতু নির্মাণ করবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি, গুজব, মিথ্যা প্রচারণার কোনও অবকাশ নেই।

বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, কৃষি সরঞ্জাম ইত্যাদি প্রদান করে আসছে। বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা অনেক পরিশ্রমী বলে তারা এই সরকারি সহায়তা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবে বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু শুক্রবার বিকালে কাউখালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়কুল আশ্রায়ণ  প্রকল্প এবং বাশুরী গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের শুভ উদ্বোধন করেন এবং এ সময় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এখানে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লাবনী চাকমার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বিশেষ অতিথি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম শংকর কুমার কর, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবির ও সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল রশীদ মিল্টন।

এর আগে মন্ত্রী বাশুরী গ্রামে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান দুলহান এ ওয়াহিদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের শুভ উদ্বোধন করেন।

এরপর কাউখালী উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী’র ঐচ্ছিক তহবিল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দুঃস্থদের মাঝে সহায়তামূলক অর্থের চেক বিতরণ করেন। এখানে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য কৃষি সহায়ক প্রকল্পের’ অধীনে স্থানীয় বিভিন্ন ধান ফসল কৃষক গ্রুপের মাঝে পাওয়ার টিলার ও এল.এল পাম্প বিতরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.