ঝিনাইদহে আ’লীগ ১০ ও বিদ্রোহী ৪টিতে জয়, ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: জাল ভোট দেওয়া, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ সদর ও হরিনাকুন্ডু উপজেলার শনিবারে ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন শেষ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদরের ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের তিনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এদিকে ভোট গ্রহণ চলাকালে ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রর্থীরা।

Election Picture-Jhenaidah
লাইনে দাঁড়িয়ে নারী ভোটারদের অপেক্ষা

তারা জানিয়েছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে এই অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জানিয়েছেন ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজিজুর রহমান মন্ডল ভোটারদের হুমকী, কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে বেলা ৩ টায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু জানিয়েছেন, দলের নেতাদের বিষয়টি অবহিত করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন।

অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে মহিলাসহ চার ব্যক্তিকে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাসহাটিয়া ইউনিয়নে শীতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে মোতালেব জোয়াদ্দার (২৫) নামে আ’লীগ কর্মীকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। একইভাবে সদর উপজেলার কালিচরনপুর ইউনিয়নের উত্তর-কাষ্টসাগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় আল-আমিন নামের এক ব্যক্তিকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে লাইনে দঁড়িয়ে সরকারি দলের সদস্যরা ব্যাপকভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে। বেলা ১১ টায় সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পানামি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। একই অবস্থা হরিশংকরপুর, সিতারামপুর কেন্দ্রে। পদ্মাকর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হরিনাকুন্ডু উপজেলার শিতলী মান্দারতলা, ভাতুড়িয়া, কাপাশহাটিয়, ঘোড়দা কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ভোটারদের নানাভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে।

পথে পথে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এখানে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছে একাধিক প্রাথী। রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ভবিতপুর কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে একজনের কানে ধরে উঠাবসা করানো হয়েছে। এই কেন্দ্রে এক মহিলা ভোটার তার ভোট দিতে এসে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার ভোট কেন অন্যরা দিয়ে দেবেন। নিত্যানন্দপুর, পোড়াহাটি ও আড়ুয়াকান্দি কেন্দ্রে ব্যাপক হারে জাল ভোট দিতে দেখা গেছে।

এছাড়া সদরের নলডাঙ্গা, ফুরসন্দি ইউনিয়নের বেশ কয়টি ভোট কেন্দ্রে সরকারি দলের সমর্থকরা ভোটারদের প্রভাবিত করতে দেখা যায়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু জানান, পোড়াহাটিতে রাশেদ আলী মেম্বরকে মারপিট করেছে সন্ত্রাসীরা। দূর্গাপুর, হিরাডাঙ্গা, চাপড়ি, কালীচরনপুর, নাচনা, বড়কামারকুন্ডু, এলাকায় ভোটাররা ভোট দিতে যেতে পারেনি। উত্তর কাষ্টসাগরা কেন্দ্রে রেজাউল ইসলাম মাষ্টারকে মারধর করেছে প্রতিপক্ষরা।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে হুমকী ধমকি ও ব্যাপকহারে জাল ভোট দেওয়ার কারণে তাদের প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া কোন প্রার্থী ভোটে অনিয়মের কোন অভিযোগ করেন নি। তিনি বলেন, জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে দুই জনের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.