সাতক্ষীরায় অর্নবের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় বখাটেদের হাতে নির্যাতিত মেধাবী ছাত্র সাদিদ ফারজিন অর্নবের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করে।

এ সময় তারা ‘অর্নবের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তি দাও’, ‘অর্নবের সুইসাইড নোট, তদন্ত কর, দোষীদের শাস্তি দাও’, ‘বখাটে রাহুলের শাস্তি চাই’, ‘বখাটে পাভেলের শাস্তি চাই’, ‘প্রতারকদের শাস্তি চাই’, ‘পেন্যাল কোড ৩০৫ ধারা গেল কোথায়’ প্রভৃতি স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করে।

Satkhira Student movement photo-1
সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিদ ফারজিন অর্নবের সুইসাইড নোট তদন্ত করতে হবে। ওই নোটে উল্লিখিত বখাটে রাহুল ও পাভেলকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, সুইসাইড নোটের বর্ণনা অনুযায়ী বখাটে রাহুল ও পাভেল মেধাবী ছাত্র অর্নবকে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ছয় দফা পিটিয়েছে। এতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে।

শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে বখাটে রাহুল ও পাভেলকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিদ ফারজিন অর্নব বখাটেদের হাতে কয়েক দফায় নির্যাতিত হয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তার লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটে বেরিয়ে আসে আত্মহত্যার নেপথ্য কারণ। এতে ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে এস আই নজরুল ইসলাম জানান, অর্ণবের মৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তাছাড়া পরিবার ময়না তদন্তেও রাজি হয়নি। মামলা হলে এর যথাযথ তদন্তে পুলিশ সবরকম ভূমিকা রাখবে।

এদিকে অর্ণবের মায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অর্ণব ছিল আমাদের আশার বাতিঘর। ওই বাতিঘরে অন্ধকার নেমে এসেছে। ওর এসএসসির এই ‘এ প্লাস’ আমাদের কষ্টকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। আমার ছেলে অর্ণব আর আমাদের মাঝে নেই। কার জন্য এখানে থাকবো, কার জন্য চাকরি করবো? সাতক্ষীরায় থাকবো না-চাকরি করবো না। আমার ছেলে নিজে ৯ তারিখে না মরলেও তাকে ১০ তারিখে মার্ডার করতে ঢাকা থেকে আসতে চেয়েছিল রাহুল।’ মোবাইল ফোনে এই কথাগুলো বলছিলেন অর্ণবের মা মেহেরুন্নেছা। বখাটেদের হাতে ছয়বার মার খাওয়ার পর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল মেধাবি ছাত্র অর্ণব। ছেলের স্মৃতি ভুলে থাকতেই সাতক্ষীরা শহরের রাজার বাগানের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি শ্যামনগরে।’’

অর্ণবের বাবা জিল্লুর রহমান শ্যামনগরে নুরনগর অগ্রণী ব্যাংক শাখায় কর্মরত আছেন। অর্ণবের মা মেহেরুন্নেছা মেরিস্টোপ সাতক্ষীরা শাখায় কর্মরত ছিলেন। ছোট ভাই আবীর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

অর্ণবের বাবা জিল্লুর রহমান বলেন, অর্ণব আর ফিরে আসবে না। যাদের কারণে অর্ণব আত্মহত্যা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।

সাতক্ষীরা সদরের রাজার বাগান এলাকার ব্যাংকার জিল্লুর রহমানের ছেলে সাদিদ ফারজিন অর্ণব মে মাসের ৯ তারিখে আত্মহত্যা করে। ১৩ তারিখ এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর জানা যায়, জিপিএ-৫ পেয়েছে আত্মহননকারী এই কিশোর।

সাতক্ষীরা শহরের রাজার বাগান এলাকায় অর্ণবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কনক্রিটের দেওয়ালে তার শেষ লেখাগুলো। অর্ণব কবিতা লিখতো, পড়তো প্রচুর বই।

চিঠি পড়ে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে একটি মেয়েকে ভালোবেসে এসেছে অর্ণব। কিছুদিন বেশ ভালো সময় কেটেছে ওদের। এরপর বিভিন্ন কারণে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। সম্প্রতি মেয়েটির ওপর অনুরক্ত আরেক কিশোর পনের বিশজনের দল নিয়ে অর্ণবের ওপর ছয়বার চড়াও হয়। অর্ণব তখন রোজা রেখেছিল।

শেষবার ছেলেগুলোর মারধরে অর্ণবের কান কেটে রক্ত পড়তে থাকে। ওর পরিচিত সমাজে ওকে এবং ওর পরিবারকে ছোট হতে হয়। এসব ঘটনায় অর্ণবের আত্মসম্মানবোধ ভীষণ আঘাতগ্রস্ত হয়। এ সময়ে বন্ধু ও স্বজনদের কাছ থেকে ক্রমেই সে দূরে সরে যেতে থাকে।  অভিমানী এই কিশোর যে ধীরে আত্মহত্যার প্রস্তুুতি নিচ্ছে, তা কেউ বুঝতে পারে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.