রোয়ানুর আঘাতে লণ্ডভণ্ড ফাতড়ার টেংরাগিরি

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী): উপকূলের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষাকারী কুয়াকাটা সাগর মোহনা ঘেঁষা ফাতড়ার টেংরাগিরি বনাঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে। ঝড়ের তোড়ে রিভার সাইডের হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ গাছ ভেঙে পড়েছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে পড়া এই গাছগুলো ভেসে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বনাঞ্চল দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে রোয়ানুর ঝড়ো বাতাস।

????????????????????????????????????
ঝড়ের তোড়ে হাজার হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে

কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সাগর পথে ভ্রমণের অন্যতম স্পট রিভার ও সাগর ঘেঁষা গৈয়ামতলা পার্কটিও এখন সাগরের ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৯ হাজার ৯৭৫ একরের বিশাল ফাতড়ার টেংরাগিরি বনাঞ্চল গত কয়েক বছর ধরেই সাগর ও নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছিলো। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের মহাসেন তাণ্ডবে এ বনাঞ্চল প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে উপকূলের অন্তত ১০ লক্ষাধিক মানুষের সম্পদ ও জীবন রক্ষা করছিলো। কিন্তু এবারের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে এ বনাঞ্চলের রিভার সাইড।

সোমবার দিনভর ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকত থেকে চড়পাড়ার নচেতার খাল, ফেউচ্চাখালি খাল মোহনা থেকে বনাঞ্চলের অভ্যন্তরের শতশত গাছ উপড়ে পড়ে আছে। রোয়ানুর আঘাতে গোলবাগান এলাকার এক হাজার গোল গাছ চাড়া ও সাড়ে ছয় হাজার কেওড়া বাগান নষ্ট হয়ে গেছে বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানালেও বাস্তবে এ ক্ষতির পরিমান কয়েকগুণ বলে স্থানীয়রা জানান।

ফেউচ্চাখালির খাল এলাকায় দেখা যায়, কয়েকটি বানর ও নাম না জানা পাখির মৃতদেহ চরে আটকে আছে। ঝড়ের তোড়ে এই প্রাণিগুলো মারা গেছে বলে জানালেন স্থানীয় যুবক ইলিয়াশ। এই বনে বানর ছাড়া গুঁই সাপ, বিরল প্রজাতির পাখি, শুকর, কাঠবিড়ালী, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পেঁচা, চিল ও বিভিন্ন ধরণের কাঁকড়া দেখা যায়। বনাঞ্চলের সাথে সাথে এই প্রাণিবৈচিত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এলাকার মানুষ জানান।

ফাতড়ার বনাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বনাঞ্চলের রিভার সাইডের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে। রিভার সাইডের বাগানের অভ্যন্তরে সাগর ও নদীর জোয়ারের পানি ওঠা-নামা করায় বনের বালুর স্তর ক্ষয়ে গাছের মূল শিকড় বের হয়ে গেছে। এ কারণে ঝড়ের প্রথম আঘাতেই এই গাছগুলো হেলে পড়েছে।

গৈয়ামতলা পার্কে ঘুরতে এসেছেন নীলফামারীরর ১৫ সদস্যের একদল পর্যটক। এ দলের আবির, ইতিকা জানালেন, এ পার্কে বসে সাগর ও বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যেতো। কিন্তু এখন সৈকত জুড়েই ভাঙা গাছ। আর বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে সাগর পাড়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তারাও বনের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পাখি মরে পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানালেন।

বড় নিশানবাড়িয়া ফরেষ্ট ক্যাম্প আমতলী রেঞ্জের ফাতড়ার বনাঞ্চলের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাফর উল্লাহ জানান, বিশাল এ বনাঞ্চলের দু’একদিনেই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা সম্ভব নয়। তাদের হিসেবে কয়েক হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে। এছাড়া সাগর উত্তাল মৌসুমেও জোয়ারের পানির তোড়ে গাছ ভেঙে যাচ্ছে বলে তিনি জানালেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.