বাবুল সরদার, বাগেরহাট ও জাহিবা হোসাইন (মংলা): দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আগ্রহে সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ মাস্টার বাহিনীর প্রধানসহ ১০ দস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাটের মংলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে বিপুল পরিমান গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গোয়েন্দা) কর্নেল আনোয়ার হোসেন, র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম, উপ অধিনায়ক মেজর আদনান কবির, র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম, খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মনিরুজ্জামান, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম, পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরে হেলিকপ্টারে করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মংলায় আসেন।
বনজীবী ও বনসংলগ্ন এলাকাবাসী আত্মসমর্পণের এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে তারা দস্যুদের অস্ত্র-গুলি সরবরাহকারী এবং আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা গডফাদারদের আটকের দাবি করেন। নতুবা দস্যুতা দমন করা কঠিন হবে বলে তারা মত দেন।
গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারনে পরে তা স্থগিত করা হয়। ওইদিন ভোরে আত্মসমর্পণের লক্ষ্যে সুন্দরবনের চরাপুটিয়ার ভারানী খালে এসে র্যাব-৮ (বরিশাল) এর কাছে দেশি-বিদেশি মোট ৫১টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় পাঁচ হাজার গুলি জমা দেন মাস্টার বাহিনীর সাত সদস্য। এরপর থেকে তারা র্যাব-৮ এর হেফাজতে ছিলেন।
এদিকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান শুরুর আগে র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদুল আলম বলেন, এই আত্মসমর্পণের ফলে সুন্দরবনের অন্যান্য দস্যু বাহিনীও অস্ত্র ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদ্বুদ্ধ হবেন। আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হবে। তবে তাদের সাজা কমিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে বিশেষভাবে সহায়তা করা হবে।
র্যাবের কাছে অস্ত্র-গুলি জমাদানকারী আত্মসমর্পণকারীরা হলেন- বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে মজিদ ওরফে কাদের মাস্টার (৪৭), সেকেন্ড ইন কমান্ড সোহাগ আকন (৩৭), ফজলু শেখ (৩৫), সোলায়মান শেখ (২৮), মো. শাহিন শেখ (২৮), মো. হারুন (২৪), আরিফ সরদার (২২), আসাদুল ইসলাম কোকিল (২৭), সুমন সরকার (৩৪) ও সুলতান খান (৫৮)। এদের বাড়ি বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন এলাকায়। তারা সবাই দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে মাষ্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ জানান, বাগেরহাটের রামপাল এলাকার এক ইউপি চেয়ারম্যানের হাত ধরে প্রথমে সে বনদস্যুতায় নেমে পড়ে। পরে রাজু বাহিনীর সাথে থেকে সুন্দরবনে বনদস্যুতা চালায়। সুন্দরবনের এক সময়ের ত্রাস রাজু বাহিনী থেকে বের হয়ে সে নিজেই ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে মাস্টার বাহিনী গঠন করে বনদস্যুতা চালাতে থাকে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে র্যাবের তৎপরতায় ও ক্রসফায়ারে একের পর এক বাহিনী প্রধানসহ বনদস্যু নিহতের ঘটনায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মসমর্পনের চেষ্টা করতে থাকে। পরে তারা র্যাবের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, গত তিন বছরে বন্দুকযুদ্ধে ১৬৭ জন জলদস্যু-বনদস্যু নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৮ জন ছিল বাহিনী প্রধান। এ সময়ে দস্যুদের ব্যবহৃত ৩৮৩টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে বনজীবী ও বন সংলগ্ন এলাকাবাসী বলছেন, সুন্দরবনে দস্যুদের অস্ত্র ও গুলি সরবরাহকারী এবং আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা গডফাদারদের আটক করা অত্যন্ত জরুরি। নতুবা দস্যুতা দমন করা কঠিন হবে। নতুন করে এমন বাহিনী গঠিত হতে পারে।