জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শাখা কর্মকর্তা (এসও) কামাল হোসেন আখন্দ নিজেই ঠিকাদার সেজে কাজ করছেন। খাল খননসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নাম মাত্র কাজ করে বিল তুলে নিচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি হরিণাকুন্ডু পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) নতুন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) দায়িত্ব গ্রহণের পর এসও কামালের দুর্নীতি ধরা পড়ে। এসডিই মতিয়ার রহমান তাকে সঠিকভাবে কাজ শেষনির্দেশনা দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ঠিকাদার এবং বেশ কিছু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কাজ দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এসও কামাল। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কামাল আখন্দ এখন চেষ্টা করছেন।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভবানীপুর ও লতিডাঙ্গা অভিমুখে বয়ে যাওয়া টি-১ (এস-২) সেচ খালটির ২.৫ কিলোমিটার খননের জন্য ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ ১১ লাখ টাকার ই-টেন্ডার করে। টেন্ডারে খুলনার আমিন এন্ড কোং নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ পায়।
কিন্তু কামাল আখন্দ ঠিকাদারের নিকট থেকে ৪ লাখ টাকায় কাজটি কিনে নিজেই করছেন। কাজটি সঠিক ও যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়নি। কাজ না করেই তিনি বিল উত্তোলনের চেষ্টা করেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মতিয়ার রহমান সরজমিনে কাজটি তদন্ত করে বিল না দেওয়ার ঘোষণা দিলে বিপাকে পড়েন কামাল আখন্দ।
এসডিই মতিয়ার রহমান নিজে সরজমিনে কাজের মান পরিদর্শনে উক্ত এলাকায় গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ্য করেন। এ সময় তিনি ঠিকাদারকে সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দেন। অন্যথায় কোনোক্রমেই কাজের বিল দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন।
এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলমসহ স্থানীয় ব্যক্তিগণ যথাযথভাবে কাজটি সম্পাদনের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। এদিকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার পর খালটির দুপাড়ে লাগানো বনজ ও ফলদ গাছ কেটে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করেন। এসও কামাল আখন্দ বিভিন্ন ঠিকাদার ও বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কাজ দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার চটকাবাড়ীয়া আন্দুলিয়া এস-১ খালের ব্রীজে একই কাজ দুইটি টেন্ডারের মাধ্যমে দুই জন ঠিকাদারকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসও কামাল আখন্দের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও এস-১ এর টি-২ খালের কাজ না করে বিল উত্তোলনসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তিনি ইতিমধ্যেই ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কথা শুনেছেন। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান। জানতে চাইলে এস ও কামাল আখন্দ বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মতিয়ার রহমান জানান, সরেজমিনে তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে সতর্ক করে কাজগুলো ভাল মানের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।